
গত সপ্তাহে নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বড় কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে গত সোমবার। বিক্ষোভকারীরা সেদিন দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে এবং হতাহতের ঘটনার অধিকাংশই সংঘটিত হয় এদিন।
স্বল্প সময়ের এই রক্তাক্ত বিক্ষোভের আপাত সমাপ্তি ঘটে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। প্রাণহানি এড়াতে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে হেলিকপ্টার যোগে রাজধানী কাঠমুন্ডু ছাড়েন তিনি। যদিও তিনি দেশ ছেড়েছেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত না।
কিন্তু দেশটিতে কারা সংগঠিত করলো স্বল্পমাত্রার কিন্তু সফল এই বিপ্লব? বিক্ষোভকারীদের বড় একটি অংশই ছিল শিক্ষার্থী, অনেকে স্কুল ও কলেজের ইউনিফর্ম পরে রাস্তায় নামে। আয়োজকেরা এ আন্দোলনকে “জেন জেড ডেমোনস্ট্রেশনস” নামে আখ্যায়িত করেছেন।
‘নেপো কিড’ ক্ষোভ কীভাবে বিক্ষোভে আগুন জ্বালালো
সোমবারের সহিংসতার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #PoliticiansNepoBabyNepal, #NepoKids এবং #NepoBaby হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছিল।
কাঠমান্ডুর সংসদ ভবনের আশপাশে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। তাদের হাতে ছিল নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড— “দুর্নীতি বন্ধ করো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়”, “সোশ্যাল মিডিয়া আনব্যান করো” এবং “যুবসমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে”।
#NepoKid, #NepoBabies এবং #PoliticiansNepoBabyNepal হ্যাশট্যাগে ভেসে যায় টিকটক ও রেডিট। তরুণদের অভিযোগ, রাজনীতিবিদদের সন্তানরা প্রিভিলেজ ও ক্ষমতার জোরে এগিয়ে যাচ্ছে, পরিশ্রম বা যোগ্যতার কারণে নয়।
একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— “নেতাদের সন্তানরা বিদেশ থেকে গুচ্চি ব্যাগ নিয়ে ফেরে, জনগণের সন্তানরা আসে কফিনে”।
নেপালে ১৫–২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৯.২ শতাংশ। দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে অনেক তরুণ বিপজ্জনক কাজে জড়াতে বাধ্য হচ্ছে, এমনকি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবেও লড়ছে।
বিশ্বব্যাপী চলমান ‘নেপো বেবি’ বিতর্ক থেকে অনুপ্রাণিত এই প্রচারণা নেপালের তরুণ সমাজে গভীর সাড়া ফেলেছে। তারা সাধারণ মানুষের দুর্দশার সঙ্গে রাজনীতিবিদদের সন্তানের বিলাসী জীবনযাত্রার বৈপরীত্য তুলনা করছে।
আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তুতে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’র পরিবার। অভিযোগ, রাজনৈতিক নেপো কিডরা দুর্নীতির অর্থে সুবিধা পাচ্ছে, আর তা তরুণদের ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে।