
নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি থেকে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি
কাঠমান্ডুতে শুরু হতে যাচ্ছে রাজনৈতিক ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। শপথ গ্রহণের পরপরই রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন শীতল নিওয়াসে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক বসবে।
নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল, নেপালের ‘জেনারেশন জেড’ আন্দোলনের প্রতিনিধিরা এবং দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এক সপ্তাহের টানা বিক্ষোভ-অভ্যুত্থান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর এই সমঝোতায় পৌঁছায় তিন পক্ষ।
প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি থেকে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে (জুলাই ২০১৬–জুন ২০১৭)। দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীল নীতির কারণে তিনি তখন যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন, তেমনি বিরোধিতারও মুখোমুখি হয়েছিলেন।
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের এই উত্তাল সময়ে তার সৎ ও আপসহীন ভাবমূর্তি তাকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। বিপুল সংখ্যক আন্দোলনকারী তাকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানায়। ইতোমধ্যে অনেকেই তার নিয়োগকে তুলনা করছেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে, যিনি গত বছর ছাত্র আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
১৯৫২ সালে পূর্ব নেপালের এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেন সুশীলা কার্কি। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার পরিবার নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালার ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
১৯৭২ সালে মহেন্দ্র মোরাং ক্যাম্পাস থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন কার্কি। ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর ১৯৭৮ সালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
১৯৭৯ সাল থেকে বিরাটনগরে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ১৯৮৫ সালে মহেন্দ্র মাল্টিপল ক্যাম্পাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন।
বিচার বিভাগীয় জীবন ও বিতর্ক
২০০৯ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন সুশীলা কার্কি। এক বছর পর স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হন।
তবে ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাকে নিয়ে শুরু হয় বড় বিতর্ক। তখনকার শাসকদল নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর আইনপ্রণেতারা তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনেন। অভিযোগ ছিল, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধানকে অযোগ্য ঘোষণার রায়ে তিনি পক্ষপাত দেখিয়েছেন। অভিযোগ উঠতেই তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন।
কিন্তু বিষয়টি উল্টো ফল দেয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় জনগণ রাস্তায় নামে, সুপ্রিম কোর্টও হস্তক্ষেপ করে। কিছুদিনের মধ্যেই অভিশংসন প্রস্তাব প্রত্যাহার হয় এবং কার্কি আবার দায়িত্বে ফেরেন। এক মাস পর জুন ২০১৭-তে অবসরে যান তিনি।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক রায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে দুর্নীতির দায়ে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়া প্রকাশ প্রসাদ গুপ্তর দণ্ডাদেশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নেপালের রাজনীতি এখনো বিক্ষুব্ধ। তবে জনআন্দোলনের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন সুশীলা কার্কি, যিনি দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত এবং যাকে ঘিরে নেপালি রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন কৌতূহল।