
ফাইল ছবি
অবরুদ্ধ গাজার মানুষের কাছে খাদ্য, পানি ও ওষুধ পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করেছিল আন্তর্জাতিক মানবিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। ইউরোপের বিভিন্ন বন্দর থেকে রওনা হওয়া এই বহরে ছিলেন ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ যাত্রী। আইনজীবী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিয়েছিলেন। বহরের অন্যতম আলোচিত অংশগ্রহণকারী ছিলেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনের তরুণী গ্রেটা থুনবার্গ।
কিন্তু গাজা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাতেই বহরের ওপর হানা দেয় ইসরায়েলি নৌবাহিনী। বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে একের পর এক জাহাজ আটক করে তারা। ইসরায়েলের দাবি, গাজার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করা ৪২টি নৌযানের মধ্যে ৪১টিই তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। আটক কর্মীদের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতির কথাও জানায় তেলআবিব।
এই অভিযানে গ্রেটা থুনবার্গকেও আটক করা হয়। আটকের আগে রেকর্ড করা এক ভিডিওতে তিনি জানান, ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে অপহরণ করেছে এবং তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি জুয়েলেভেলিল ম্যান্ডেলা এক ভিডিওতে বলেন, ইসরায়েল তাঁদের জোরপূর্বক আটক করেছে।
তবে সব জাহাজই আটক হয়নি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো ফ্লোটিলার একটি জাহাজ, ‘মিকেনো’, ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে ফিলিস্তিনি জলসীমায় প্রবেশ করে গাজার উপকূলের কাছাকাছি চলে যেতে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে আরও একটি জাহাজ ‘মেরিনেট’ এখনও চলাচল করছে বলে অনলাইনে ট্র্যাক করা গেছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এক লাইভস্ট্রিমে জানিয়েছে, মেরিনেট এখনো শক্তভাবে এগিয়ে চলছে, যদিও সেটি মিশরের উপকূলের সমান্তরাল অবস্থানে রয়েছে। মানবিক এই বহর এখনো গন্তব্যের দিকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, যা সমর্থকদের কাছে বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, গ্রিস, তিউনিসিয়া ও তুরস্কে বিক্ষোভ হয়েছে। জাতিসংঘ আটক কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফ্লোটিলা আটকে দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সব ইসরায়েলি কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছেন এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের ২৩ জন নাগরিক ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক। বেলজিয়াম, জার্মানি ও স্পেনও এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, ফ্লোটিলার অভিযান ছিল উসকানিমূলক। তারা জানিয়েছে, আটক সবাইকে ইউরোপে ফেরত পাঠানো হবে এবং গাজার অবরোধ অক্ষুণ্ণ থাকবে।
যদিও বহরটি শেষ পর্যন্ত গাজায় পৌঁছাতে পারেনি, তবুও বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে মিকেনো ও মেরিনেটের এগিয়ে চলা ফ্লোটিলার মানবিক সংগ্রামকে নতুন আশার প্রতীক হিসেবে সামনে এনেছে।