
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় নতুন করে ভয়াবহ বোমা ও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতভর চলা এ হামলায় অন্তত ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অন্তত সাতজন শিশু রয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় গাজা সিটি ছিল এবারও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। সেখানে দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত মানুষদের ওপর বর্ষিত হয়েছে একের পর এক বোমা। শুধু ওই অঞ্চলে অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। শহরের তুফফাহ এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে হামলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবনও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি এলাকা, যেটিকে ইসরায়েল তথাকথিত “মানবিক নিরাপদ অঞ্চল” ঘোষণা করেছিল, সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় দুই শিশু নিহত ও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে এই এলাকাটিও বারবার টার্গেট হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরসহ আরও কয়েকটি স্থানে হামলার খবর মিলেছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলের কিছু হাসপাতাল এখনো চালু থাকলেও জ্বালানি সংকটে তারা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। আহতদের সেবা দেওয়ার মতো সক্ষমতা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
এর আগে শুক্রবার ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একাধিক পোস্টে ইসরায়েল ও হামাসকে দ্রুত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল একটি প্রাথমিক ‘প্রত্যাহার লাইন’-এ রাজি হয়েছে এবং হামাসও তার ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা মেনে নিয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম ধাপে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি বন্দিকে ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে হামাস এখনও নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট জবাব দেয়নি।
আগামী সোমবার মিশরে ইসরায়েল, হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার সেখানে অংশ নেবেন।
অন্যদিকে হামাস অভিযোগ করেছে, ট্রাম্পের আহ্বানের পরও গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তারা একে ‘নেতানিয়াহুর মিথ্যাচার ও শান্তিবিরোধী অবস্থানের প্রমাণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাস্তবে এই সংখ্যা সরকারি হিসাবের তিনগুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।