
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আবারও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে তাদের পছন্দের ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইসি সচিবের কাছে পাঠানো হয়। চিঠির সঙ্গে দলটি শাপলার সাতটি ভিন্ন নকশাও জমা দিয়েছে।
এনসিপি চিঠিতে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে দলটি ‘শাপলা’ প্রতীককে গণমানুষের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ফলে এই প্রতীকের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে, যা অন্য কোনো প্রতীক দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয় বলে তারা দাবি করেছে।
পটভূমি ও প্রতীক বিতর্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর ৯(১) ধারা অনুযায়ী নতুন করে প্রতীক তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে। এনসিপির দাবি, ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটি ১৫০টি প্রতীক নিয়ে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছিল, যেখানে ‘শাপলা’ প্রতীক অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে ৪ জুন কমিশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে তাদের জানানো হয়।
এর আগে, গত ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে ৩ আগস্ট দলটি প্রতীক বরাদ্দের পছন্দক্রমে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা, এবং ৩. লাল শাপলা উল্লেখ করে চিঠি পাঠায়।
এনসিপির অভিযোগ, ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বরের দরখাস্তের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই ইসি ৩০ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যা তারা বিধিসম্মত নয় বলে দাবি করেছে।
আইনি ব্যাখ্যা ও সমর্থন
দলটি জানায়, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীসহ সারাদেশের ১০১ জন আইনজ্ঞ লিখিতভাবে জানিয়েছেন, এনসিপিকে ‘শাপলা’ প্রতীক দিতে কোনো আইনি বাধা নেই। এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর কোনো আইনি জটিলতা নেই।
এছাড়া নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রকাশ্যে এনসিপির পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, তাঁদের দল শাপলা প্রতীক বরাদ্দে কোনো আপত্তি রাখে না।
ইসির প্রতি অভিযোগ
এনসিপি অভিযোগ করেছে, ইসি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে এবং শাপলা প্রতীক না দিয়ে ‘আইনবহির্ভূত ও বৈষম্যমূলক আচরণ’ করছে। দলটির দাবি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে এনসিপিকে আসন্ন নির্বাচনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করছে।
তাদের মতে, এই মনোভাব ইসির নিরপেক্ষতা ও স্বাধীন সাংবিধানিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রতিশ্রুতি ক্ষুণ্ন করছে।
চিঠির শেষাংশে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায়—২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ৯(১) ধারা সংশোধন করে দলটির অনুকূলে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলার মধ্যে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ দিতে।
দলের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি রাজনৈতিক প্রতীক নয়, বরং দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ন্যায় ও স্বচ্ছতা পুনঃপ্রতিষ্ঠারও প্রতীক হয়ে উঠবে।