
জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে বাম ধারার চারটি রাজনৈতিক দল। দলগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) এবং বাংলাদেশ জাসদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলগুলো জানায়, জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) সন্নিবেশিত থাকায় বর্তমান অবস্থায় তারা সনদে সই করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের যাত্রার উদ্বোধনে বলেছিলেন- সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, কেবল সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে ধরা হবে। কিন্তু ১৪ অক্টোবর আমাদের কাছে যে চূড়ান্ত কপি পাঠানো হয়েছে, সেখানে ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোও সনদে যুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি।”
দলগুলো অভিযোগ করে, জুলাই সনদের প্রথম অংশে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, সংশোধনের প্রস্তাব দিলেও তা যুক্ত করা হয়নি। আরও বলা হয়, সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের ক্রান্তিকালীন বিধানে স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রক্লেমেশন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা দেশের স্বাধীনতার ভিত্তি। পূর্বের খসড়ায় সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত খসড়া থেকে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “সংবিধানের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ- এর প্রশ্নে আমরা আপস করতে পারি না। তাছাড়া ১৫০(২) অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে কোনো প্রশ্ন আদালতে তোলা যাবে না—এমন সনদে স্বাক্ষর করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদের ৩ নম্বর অঙ্গীকারে বলা হয়েছে- কেউ এ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না। এটি নাগরিকের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী।”
দলগুলোর প্রস্তাব, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিষয়ে সর্বসম্মতি হয়েছে, কেবল সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে সনদে স্বাক্ষর নেওয়া হোক; ভিন্নমতগুলো আলাদা এনেক্স হিসেবে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদ (মার্ক্সবাদী)-এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
দলগুলোর পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়- বিতর্কিত ধারা ও ভিন্নমত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জুলাই সনদে তারা সই করবে না।