
ফাইল ছবি
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিদেশে কোনো প্রবাসীর মৃত্যু হলে তার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় স্বজনদের কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান এবং পরিবার।
প্রবাসে মৃত্যুর পর লাশ দেশে আনার ধাপগুলো সাধারণত নিম্নরূপ:
মৃত্যু সংবাদ দূতাবাসে জানানো: প্রবাসে কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটলে প্রথমেই নিকটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে বিষয়টি জানাতে হয়। স্থানীয় পুলিশ ও হাসপাতাল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। প্রবাসী বা নিয়োগকর্তা এই তথ্য দূতাবাসে জমা দেন।
মৃত্যু সনদ ও অন্যান্য প্রমাণপত্র সংগ্রহ: মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা হাসপাতাল থেকে মৃত্যু সনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) সংগ্রহ করতে হয়। প্রয়োজনে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং প্রবাসীর কর্মসংস্থান বা ভিসা সম্পর্কিত কাগজপত্রও নিতে হয়। এই সব কাগজপত্র দেশে লাশ আনার জন্য বাধ্যতামূলক।
নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) ও ক্লিয়ারেন্স: বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মরদেহ পাঠানোর অনুমতি হিসেবে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। এরপর স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিস থেকে মরদেহ পরিবহনের ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।
মরদেহ প্যাকিং ও পরিবহন প্রস্তুতি: আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী মরদেহকে কাফনে মোড়ানো হয় এবং কফিনে রাখা হয়। বিমান পরিবহনের জন্য মরদেহকে ফ্রিজিং বক্সে সংরক্ষণ করা হয় যাতে যাত্রাপথে মরদেহ সুরক্ষিত থাকে।
টিকিট ও পরিবহন খরচ: অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা বা বীমা কোম্পানি মরদেহ পরিবহনের খরচ বহন করে। যদি তা না করে, তবে পরিবার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বা দূতাবাস আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশে গ্রহণ ও দাফন: সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর মরদেহ দেশে পৌঁছায়। স্বজনরা বিমানবন্দরে লাশ গ্রহণ করেন। এরপর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়। অনেক সময় সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা মৃত প্রবাসীর পরিবারকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে।
প্রবাসীর লাশ দেশে আনার এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া পরিবারগুলোর জন্য গভীর কষ্টের হলেও এই ধাপগুলো জানা থাকা উচিত, যাতে কঠিন মুহূর্তে তারা দ্রুত, সঠিক এবং শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন।