
হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প আবারও অভিযোগ তোলেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের সাথে ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের কারণে এ বছর সেখানে অনুষ্ঠিতব্য জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কর্মকর্তা অংশ নেবেন না।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) নিজের সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জি–২০ সম্মেলন দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে—এটি লজ্জাজনক।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সেখানে শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানরা (ডাচ উপনিবেশবাদীদের বংশধর, যাদের মধ্যে ফরাসি ও জার্মান অভিবাসীরাও অন্তর্ভুক্ত) বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাদের জমি ও খামার বেআইনিভাবে দখল করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত এই মানবাধিকার লঙ্ঘন চলবে, তত দিন কোনো মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখবেন না। আমি ২০২৬ সালের জি–২০ সম্মেলন মায়ামি, ফ্লোরিডায় আয়োজনের অপেক্ষায় আছি।’
গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর দেশে শ্বেতাঙ্গরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। তবে এই দাবি দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ও আফ্রিকানার সম্প্রদায়ের নেতারা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে বুধবারও ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি নিজে জোহানেসবার্গে ২২ ও ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জি–২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন না এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওই গোষ্ঠী থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানান।
আগে জানা গিয়েছিল, ট্রাম্পের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সম্মেলনে যোগ দেবেন। কিন্তু অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ভ্যান্সও দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন না।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এ বছরের শুরুতে জমির মালিকানা বৈষম্য দূর করতে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেন। দেশটির মোট বেসরকারি জমির তিন-চতুর্থাংশই এখনও শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের দখলে—এই প্রেক্ষাপটে সরকার ‘এক্সপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্ট’ নামে ওই আইন চালু করে।
নতুন আইন অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে। তবে রামাফোসা বলেছেন, এটি কোনো জমি দখল নয়, বরং ন্যায্য পুনর্বণ্টনের কাঠামো।
আইনটি পাসের পরই ট্রাম্প অভিযোগ তোলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘জমি দখল করছে এবং নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষদের খুব খারাপভাবে আচরণ করছে।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা মেনে নেবে না, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এরপর মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসন তথাকথিত ‘বর্ণ বৈষম্যের শিকার’ হিসেবে ৫৯ জন শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানকে আশ্রয় দেয়।
একই মাসে হোয়াইট হাউসে রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প আবারও অভিযোগ তোলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানারদের ওপর ‘গণহত্যা’ চলছে।
এর জবাবে রামাফোসা বলেন, “যদি এমন কোনো গণহত্যা চলত, তাহলে আমার পাশে বসা এই তিনজন ভদ্রলোক এখানে থাকতেন না”—বলে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার তিন শ্বেতাঙ্গ নাগরিকের দিকে ইঙ্গিত করেন।
তিনি ইঙ্গিত দেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা যুদ্ধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যে গণহত্যা মামলা দায়ের করেছে, তাতে ট্রাম্পের অসন্তোষই হয়তো এর পেছনে মূল কারণ।
তবু ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। গত ৩০ অক্টোবর হোয়াইট হাউস জানায়, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ আসবেন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার সম্প্রদায় থেকে।
আল জাজিরা অবলম্বনে