
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে দালালচক্রের প্রতারণা থামছেই না। এবার কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের নেপালে নিয়ে আটকে রেখে মারধর, নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। সিআইডি বলছে—মানবপাচারে জড়িত এমন অন্তত ৩৫টি চক্রকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।
সিলেটের তিন যুবক সম্প্রতি এমন চক্রের শিকার হন। কানাডায় নেওয়ার কথা বলে প্রথমে তাদের পাঠানো হয় নেপালে। সেখানে পৌঁছানোর পর দালালচক্র তাদের পাসপোর্ট কৌশলে নিয়ে নেয় এবং জিম্মি করে দফায় দফায় নির্যাতন চালায়। বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর, অজ্ঞান করে ফেলা—এসব নির্মম অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পরিবারের কাছ থেকেও আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা।
প্রতারণার কৌশল প্রায় একই—বাংলাদেশ থেকে নেপাল, তারপর হংকং হয়ে কানাডা পার করার প্রতিশ্রুতি। চুক্তি ১২ লাখ টাকা। শুরুতে দিতে হয় ৫ লাখ, বাকি টাকা “কাজ করে পরিশোধ করার” লোভ দেখানো হয়। ব্যর্থ হলে নেপালে যাতায়াতের খরচ নাকি ‘ফ্রি’। এই ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই।
সম্প্রতি নেপালকে মানবপাচারের তৃতীয় রুট হিসেবে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতালি, কানাডা, আলজেরিয়া, মঙ্গোলিয়া—এমন নতুন নতুন গন্তব্যে পাচারের নেটওয়ার্ক সক্রিয় বলে জানিয়েছে সিআইডি। ৩৫টি চক্র শনাক্ত করা হয়েছে, নেপালে জড়িত একজন দালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত নেপাল দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—নেপালে এনে আটকে রেখে অর্থ আদায় ও নির্যাতনের এমন অভিযোগ এবারই প্রথম স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মানবপাচার সংক্রান্ত তদন্তাধীন ও বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৪ হাজার ৬৪৩টি। আসামি ৪২ হাজারের বেশি; গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। গত তিন বছরে মাত্র ১১ জন পাচারকারীর যাবজ্জীবন হয়েছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের কর্মী চাহিদা ও রিক্রুটিং এজেন্টদের ছত্রছায়ায় দালালচক্র আরও সক্রিয় হয়েছে। কেউ কেউ বাংলাদেশিদের নেপালের পাসপোর্টও বানিয়ে দিচ্ছে। যুবকদের বেকারত্ব, অভাব ও বিদেশে যাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষাকেই এই চক্রগুলো কাজে লাগাচ্ছে।
তাদের মতে—গ্রামভিত্তিক সচেতনতা, সঠিক কর্মসংস্থান নীতি, প্রবাসীদের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন এবং কঠোর নজরদারি বাড়াতে পারলেই মানবপাচার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।