
ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি দ্রুত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি। ডার্ক ওয়েব, র্যানসমওয়্যার, স্পাইওয়্যার ও আধুনিক হ্যাকিং টুলের ব্যবহারে এখন সাধারণ ব্যবহারকারীর কম্পিউটার ও ল্যাপটপও নিরাপদ নয়। অনেক সময় অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল থাকলেও ব্যবহারকারী বুঝতে পারেন না যে তার ডিভাইস ইতোমধ্যে হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তবে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
হ্যাক হওয়ার অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হলো ইন্টারনেট ডাটা অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া। ডিভাইস ব্যবহার না করলেও যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে অতিরিক্ত ডাটা খরচ হয়, তাহলে সেটি স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার সক্রিয় থাকার ইঙ্গিত হতে পারে। এসব ক্ষতিকর সফটওয়্যার গোপনে ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্ট্রি, পাসওয়ার্ড, ব্যক্তিগত ফাইল এমনকি ব্যাংকিং তথ্য সংগ্রহ করে অজানা সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়া কম্পিউটারের গতি হঠাৎ করে ধীর হয়ে যাওয়া হ্যাকিংয়ের আরেকটি বড় সতর্কবার্তা। সাধারণ সফটওয়্যার খুলতে দেরি হওয়া, ওয়েবসাইট লোড হতে বেশি সময় লাগা কিংবা বারবার সিস্টেম হ্যাং হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো—ডিভাইসের র্যাম ও সিপিইউ রিসোর্স কোনো ক্ষতিকর প্রোগ্রাম দখল করে নিয়েছে। এতে কাজের গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে হার্ডওয়্যার ক্ষতির আশঙ্কাও তৈরি হয়।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক লক্ষণগুলোর একটি হলো অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়া বা কাজ না করা। সাইবার অপরাধীরা সাধারণত প্রথমেই সিকিউরিটি সফটওয়্যার নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যাতে তাদের উপস্থিতি ধরা না পড়ে। ফলে অ্যান্টিভাইরাস চালু না হওয়া বা স্ক্যান করতে ব্যর্থ হওয়াকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটার বারবার ফ্রিজ হওয়া, সফটওয়ার ক্র্যাশ করা বা হঠাৎ ব্লু-স্ক্রিন আসা—এ ধরনের সমস্যাও দেখা যায়। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব লক্ষণ স্পাইওয়্যার বা র্যানসমওয়্যার সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। সিস্টেমে এমন অস্বাভাবিক আচরণ উপেক্ষা করলে হ্যাকাররা ধীরে ধীরে পুরো ডিভাইসের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এসব লক্ষণের যেকোনো একটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পূর্ণাঙ্গ অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার স্ক্যান চালানো, গুরুত্বপূর্ণ সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা এবং প্রয়োজন হলে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া জরুরি। আগেভাগে সতর্ক হলে সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে নিজের ডিভাইস ও ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখা সম্ভব।