
ওটসের এই দ্বৈত ক্ষমতা নির্ভর করে এটিকে ব্যবহারের পদ্ধতির ওপর
ফিটনেস জগতে ওটস এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম। এই অসাধারণ শস্যটি আপনার ফিটনেস লক্ষ্য যাই হোক না কেন, তা দ্রুত ওজন হ্রাস হোক বা স্বাস্থ্যকর উপায়ে শারীরিক কাঠামো মজবুত করা—দু’ক্ষেত্রেই এটি অসাধারণ ফল দিতে পারে। ওটসের এই দ্বৈত ক্ষমতা নির্ভর করে এটিকে ব্যবহারের পদ্ধতির ওপর।
১. কীভাবে ওটস ‘ফ্যাট বার্নিং’ করে?
ওজন কমানোর জন্য ওটস হলো একটি প্রধান সহায়ক। এটি কেবল স্বল্প-ক্যালোরিযুক্ত খাবার নয়, এটি আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবেও কাজ করে।
দীর্ঘস্থায়ী তৃপ্তি ও ফাইবার বুস্ট: ওটসের মূল শক্তি হলো এর উচ্চমাত্রার বিটা-গ্লুক্যান নামক দ্রবণীয় ফাইবার। এই ফাইবার পেটের মধ্যে জেলের মতো একটি স্তর তৈরি করে, যা খাবারকে ধীরে ধীরে হজম করায়। ফলে পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরা থাকে। এর ফলস্বরূপ, দিনের বেলা অতিরিক্ত স্ন্যাকস খাওয়া বা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা: ধীরে হজম হওয়ার কারণে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে দেয় না। রক্তে শর্করা স্থিতিশীল থাকলে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়, যা শরীরের ফ্যাট জমানোর প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়।

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ওটস খাওয়ার সঠিক উপায়
ওজন কমানোর প্রধান মন্ত্র হলো কম ক্যালোরি গ্রহণ করে দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখা। এই ক্ষেত্রে ওটসকে যতটা সম্ভব হালকা এবং ফাইবার-সমৃদ্ধ রাখতে হবে।
ওটসের মূল ভিত্তি হিসেবে, একে পানি বা স্কিমড বা লো-ফ্যাট দুধ ব্যবহার করে রান্না করা উচিত। এতে ক্যালোরির মাত্রা সর্বনিম্ন থাকে। মিষ্টি যোগ করার ক্ষেত্রে কৃত্রিম চিনি, মধু বা গুড় সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। মিষ্টির প্রয়োজন হলে কেবলমাত্র অল্প পরিমাণে তাজা ফল যেমন বেরি, আপেল বা সামান্য দারচিনি গুঁড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্রাকৃতিক মিষ্টি একদিকে যেমন স্বাদ যোগ করবে, অন্যদিকে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করবে। এছাড়াও, আপনার ওটসে এক চা চামচ চিয়া বীজ বা তিসি বীজ যোগ করতে পারেন। এই বীজগুলি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অতিরিক্ত দ্রবণীয় ফাইবার সরবরাহ করে, যা পেটকে আরও বেশি সময় পূর্ণ রাখে। দিনের শুরুতেই অর্থাৎ সকালের নাস্তায় এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত ওটস খেলে তা সারাদিনের অতিরিক্ত ক্ষুধা দূর করতে সাহায্য করে।
২. যখন ওটস হয় ‘মাসল ফুয়েল’
যারা দুর্বলতা কাটিয়ে স্বাস্থ্যকর উপায়ে দেহের ভর বাড়াতে এবং দৈহিক শক্তি সঞ্চয় করতে চাইছেন, তাদের জন্যও ওটস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে ওটস খাওয়ার ধরন পাল্টে ফেলতে হবে।
ক্যালোরি ও পুষ্টির ঘনত্ব: ওটসকে যখন ফুল-ফ্যাট দুধ, বিভিন্ন ধরনের বাদামের মাখন (যেমন পিনাট বাটার), মধু, খেজুর বা শুকনো ফলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়, তখন এটির ক্যালোরির পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। এই উচ্চ ক্যালোরি শক্তি এবং পুষ্টির চাহিদা মেটায়, যা স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর মেরামত: ওটস হলো উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। ব্যায়ামের পরে ওটস খাওয়া হলে এটি প্রোটিন সরবরাহ করে, যা পেশিগুলির ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর দ্রুত মেরামত এবং পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াই সময়ের সাথে সাথে পেশির আয়তন বাড়িয়ে শারীরিক কাঠামো মজবুত করে।
কর্মক্ষমতার জন্য শক্তি: ওটসে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলি ধীরে ধীরে শক্তি নির্গত করে, যা দীর্ঘ সময়ের শারীরিক পরিশ্রম বা কঠিন ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

স্বাস্থ্যকর দেহের গঠন ও ওজন বাড়ানোর জন্য ওটস খাওয়ার সঠিক উপায়
যখন আপনার লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানো এবং দৈহিক শক্তি সঞ্চয় করা, তখন ওটসকে ক্যালোরি এবং প্রোটিনের একটি শক্তিশালী প্যাকেজে পরিণত করতে হবে।
ওটসকে অবশ্যই ফুল-ফ্যাট দুধ বা অন্য কোনো উচ্চ-ক্যালোরি দুধের সাথে প্রস্তুত করতে হবে। এতে সাধারণ পানির তুলনায় অনেক বেশি ক্যালোরি যুক্ত হয়। এর সাথে অতিরিক্ত ক্যালোরি, ফ্যাট ও প্রোটিনের উৎস হিসেবে দুই থেকে তিন চামচ পিনাট বাটার বা আমন্ড বাটার যোগ করুন। প্রাকৃতিক শর্করা এবং শক্তির জন্য কলা, শুকনো ফল (যেমন খেজুর বা কিশমিশ) এবং এক চামচ মধু বা ম্যাপেল সিরাপ যোগ করা জরুরি। যারা শরীরচর্চা করেন, তারা তাদের ওটসে এক স্কুপ প্রোটিন পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন। এই প্রোটিন পাউডার পেশিগুলির ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর দ্রুত মেরামত এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। ওজন বাড়ানোর জন্য ওটস কেবল সকালে নয়, বরং ব্যায়ামের পরে (Post-Workout) গ্রহণ করা সবচেয়ে কার্যকরী। এটি পেশি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি দ্রুত সরবরাহ করে।
ওটসকে আপনার ব্যক্তিগত ফিটনেস লক্ষ্য অনুযায়ী কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করুন এবং এর পূর্ণ সুবিধা নিন।