বিলুপ্ত ছিটমহলের ভারতগামী পরিচিত মানুষদের একনজর দেখে বিদায় জানাতে এসে চিরবিদায় নিতে হলো নানী-নাতনীকে। কিন্তু কে জানে পরিচিতদের মুখ দেখার আগেই তাদেরকেই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিতে হবে! এ হৃদয় বিদায়ক ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটী সীমান্তের ডাঙ্গাপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের কাছে।
ওরা হলো নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব ভোগডাবুড়ি বিওপি বাজার প্রামানিক পাড়ার ভ্যানচালক ছমির উদ্দিন ওরফে বুধারু মামুদের স্ত্রী কোহিনুর বেগম(৫৫) ও তাদের মেয়েজামাই শাহাদাত হোসেনের(বিশু) কন্যা ও পূর্ব ভোগডাবুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার(৮)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানাগেছে, সোমবার বেলা আড়াই টার ঘটনা, ছিটমহলের মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে এ খবরে স্বামী ছমির উদ্দিন ওরফে বুধারু মামুদের ব্যাটারি চালিত রিক্সাভ্যানে উঠে মেয়ের ঘরের নাতনী সুমাইয়া আক্তারকে সাথে নিয়ে পঞ্চাশউর্দ্ধ কোহিনুর বেগম পরিচিতদের এক নজর দেখে বিদায় জানাতে সীমান্তে ছুটে যাচ্ছিলেন।
কিছু সময়ের মধ্যেই পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল কোটভাজনী ও বালাপাড়া খাগড়াবাড়ির ২৮ পরিবারের শিশুসহ ১৪৭ জন নারী, পুরুষ বহনকারী বাস ও তাদের মালামাল পরিবহনের ট্রাকের বহরও চলে আসে।। পিছন দিক থেকে আসা ভারতগামী মালামাল পরিবহনকারী ট্রাকের হুসেল শুনে আতংকে নানী-নাতনী ছিটকে রাস্তায় পড়ে গেলে ওই বহরের একটি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারাণ নানী কহিনূর বেগম এবং মুমূর্ষ অবস্থায় ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে শিশু সুমাইয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এ ঘটনার এলাকাবাসী সড়কটি ব্যারিকেট দিলে ওই গাড়ির বহরটি আটকা পড়ে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গাড়ির বহরটি ছাড়িয়ে ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করানো হয়। ভোগডাবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাদের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে গাড়ি বহরটির ভারতে প্রবেশে খানিকটা বিলম্ব ঘটে। ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোয়েস ওই দূর্ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মোছাদ্দেক হোসেন লেবু জানান, একটু আগে শিশু সুরাইয়া আক্তারের লাশ বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে, মঙ্গলবার তাদের দাফন করা হবে।