ঝালকাঠির কৃষ্ণকাঠি বিশ্বরোড সংলগ্ন অবস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। অফিসের সামনে রয়েছে দালালদের উৎপাত, ভিতরে রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খামখেয়ালীপনা।
কয়েককজন কর্মচারী ও দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঝালকাঠি আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে আসা জনসাধারণ। ব্যাংকের ট্রেজারী চালানের রশিদ জমা দেয়ার পর অতিরিক্ত ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে পাসপোর্ট করতে আসা জনসাধারণকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই চক্রের সঙ্গে পাসপোর্ট কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। দালালেরা সাধারণ পাসপোর্ট করাতে বাড়তি ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করছে।
পাসপোর্ট করতে আসা কয়েকজন অভিযোগ করেন, পাসপোর্টের জন্য সরকার নির্ধারিত আবেদনপত্র (ফরম) পূরণ করে দালাল ছাড়া জমা দেয়া যায় না। নিজ দায়িত্বে পূরণ করে জমা দিলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নানা রকমের ভুল ধরে আবেদনপত্র ফেরত দিয়ে দেন। তবে দালালদের মাধ্যমে আবেদন করলে সহজেই পাসপোর্ট মেলে। এভাবে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য তিন হাজার ও জরুরি পাসপোর্টের জন্য ছয় হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এই অর্থ জমা দিয়ে আবেদন করার পর স্বাভাবিক ক্ষেত্রে এক মাস ও জরুরি ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়।
ঝালকাঠিতে পাসপোর্টের আঞ্চলিক কার্যালয় শুরু হবার পর থেকে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে বেশ কয়েকজন দালাল হিসেবে কাজ করছে। তারা স্থানীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁদের সম্পর্কে কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন অনুসন্ধাণকালে কথা হয় মানবাধিকার কর্মী প্রভাষক অমরেশ রায় চৌধুরীর সাথে। তিনি এসেছিলেন পাসপোর্ট করতে। কিন্তু হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে নিয়মানুযায়ী সকল কাগজপত্র ঠিক করে নেয়ার পরও কর্মকর্তা সমাপ্তি রানি খামখেয়ালী করে বিভিন্ন ভুল আছে বলে সংশোধনী দিতে বলে। নিজেকে মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিলে অফিস পিয়ন আলম বলে আপনি যেই হোন আর যতই ঠিক করেন টাকা না দিলে কোন লাভ নেই, কাজ হবে না।’
বাউকাঠি ইউপি সদস্য এমদাদুল হক থলপহরি এ বিষয়ে বলেন, ‘এখানে পাসপোর্ট করতে আসলে সামনে থাকা হান্নান সিকদার নামে একজন আমার কাছে সকল কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার জন্য দেড় হাজার টাকা দাবি করে। কম দিতে চাইলে সে বলে কমের কোন সুযোগ নেই।’
নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের সোহরাব খানের পুত্র কলেজ ছাত্র মোঃ মাসুদ খান বলেন, ‘হান্নান সিকদার কাগজ ঠিক করে দেয়ার কথা বলে আমার কাছেও দেড় হাজার টাকা দাবি করে।’
এ বিষয়ে জানতে দালাল হান্নান সিকদারের ব্যবহৃত ০১৭১২০০৩৯১৫ নম্বরে বৃহস্পতিবার বিকেলে ও শুক্রবার সকালে কয়েক বার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
পাসপোর্ট অফিসের পিয়ন কাজী আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি সবার সাথে ভাল ব্যবহার করি, সবাইকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করি। আমি অফিসিয়াল বিষয় ছাড়া বাইরের কোন বিষয়ে কারো সাথে কথা বলি না।’
কর্মকর্তা সমাপ্তি রানি বলেন, ‘পাসপোর্টের জন্য সবাই কাগজপত্র ঠিক করে নিয়ে আসতে পারেন না। ভাল করে বুঝিয়ে বললে এবং বোর্ডে টানানো নোটিশ দেখে তারা তারপরেও ভুল করে। অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি আদৌ সত্য নয়।’
ঝালকাঠি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার অফিসের যদি কেউ ট্রেজারী চালান রশিদের পরেও অতিরিক্ত টাকা নেয় তাহলে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪