নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে না পারার অভিমানে ভিডিওকলে স্বামীর বাড়িতে প্রেমিকা ও প্রবাসে প্রেমিক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬টায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়ায় এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত ১১টায় পুলিশ স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে।
নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তার ঊর্মি (১৬) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানাধীন মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে।
সে চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। গত ১৪ই অক্টোবর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রংমিস্ত্রি আরিফুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বাল্যবিয়ে হওয়ায় মোবাইল কোর্ট আতঙ্কে সেদিন ঘরোয়াভাবে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। এদিকে নিহত ওমান প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন (২২) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
নববধূ ঊর্মি চিরকুটে লিখেছেন, ‘চাইছিলাম দু’জনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিলো না। এটা সত্যি ও আমার প্রথম সাথী। ওরে আমি বিয়ে করছি। কিন্তু ওর জায়গায় আমি অন্য কাউরে দিতে পারি নাই, পারবোও না। তোমরা সুখে থেকো। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা-ভাই-বোনের কাছে একটা আবদার দুনিয়াতে যেহেতু থাকতে দেয় নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। একদিন আগে পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে। সে চাওয়াটা যেন পূরণ করেন আপনারা।’
প্রবাসী সাফায়াত মৃত্যুর পূর্বে চিরকুটে লিখেছেন, ‘শেষ ইচ্ছা পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের’ ।
নিহত ঊর্মির মা নুরুন্নাহার জানান, আমার মেয়ের সঙ্গে সাফায়েত নামের একজন প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। গত ১৪ই অক্টোবর সম্মতি নিয়েই আমাদের আত্মীয় বেতুয়ার আরিফুর রহমানের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি ঊর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়েত ভিডিওকলে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী ছেলেটাই আমার মেয়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।
প্রবাসী সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, একবছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম ফেসবুক মেসেঞ্জারে আমার ছেলের সঙ্গে ঊর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে।
শনিবার রাতে সেই মেয়ে আমার ছেলের সঙ্গে ভিডিওকলে চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেসহ দু’টি জীবনের আলো নিভে গেছে। তিনটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য আমি মেয়ের বাল্যবিয়েকে দায়ী করি।
লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, বিয়ের ১৭তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিওকলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার রাত অনমুান ১১টায় নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মরদেহের পাশে হাতে লিখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার পূর্বে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশ্যে এটি লিখেছিল। এই ঘটনায় নববধূর ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।