Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শাহজালাল বিমানবন্দরে অপরাধের শাস্তি ‘বই পড়া’

shajalam-airportএখন থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে বই পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়। প্রক্রিয়াটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে খুব শিগগির চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে মোট চার শিফ্টে ব্যাপক সংখ্যক জনবল কাজ করে। বড়বড় হয়রানি-ক্রাইমের পাশাপাশি কিছু টুকিটাকি লেভেলের হয়রানিও প্রতিনিয়ত হয়। যেমন ট্রলির বিনিময়ে ৫০/১০০ টাকা গ্রহণ, এ জাতীয় মেলা টুকিটাকি।

chardike-ad

প্রথম প্রথম এই টুকিটাকিদের আর্থিক জরিমানা করা হতো। কিন্তু এতে তাদের চাকরি চলে যেতো। ফলে দুই ধরনের সমস্যা ফেস করতে হয়, ১) লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে যায় এবং ২) নতুন যারা নিয়োগ পায়, তারা আবার নতুন উদ্যমে শিক্ষানবিশের ভুমিকায় হয়রানি শুরু করে।

এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট জানান, জ্ঞানের চেয়ে শক্তিশালী শাস্তি হতে পারে না। অন্ধকার দূর করতে আলোর বিকল্প নাই। টুকিটাকিতে ধরা পড়লেই হাতে একটা বই ধরিয়ে দেয়া হবে। একসপ্তাহ পর বই জমা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এটা তাদের দৃষ্টিতে শাস্তি হতে পারে, আমার দৃষ্টিতে পুরস্কার।

অপরাধীদের পড়ার জন্য ,সব ধরণের বই থাকবে। তবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস তো থাকবেই এবং তা প্রথম সেল্ফের প্রথম সারিতে। অভিযুক্ত স্বাধীনভাবে বুকসেল্ফ ঘাটাঘাটি করে বই নির্বাচন করবে। এতে বাড়তি পাওনা হিসেবে শুরুতেই তার অনেকগুলো বইয়ের নামের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে।

ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা খুব একটা কঠিন বইতে যেতে যাচ্ছি না। মজার মজার সহজ উপন্যাসগুলোতে জোর দেবো। উদ্দেশ্য, বই পড়ার মজাটা ঢুকিয়ে দেয়া, জাস্ট সেই নেশার বীজটা বপন করে দেয়া। দ্বিতীয়বার ধরা পড়ার পর থেকে সিলেবাস একটু একটু করে কঠিন হবে, বিষয় এবং সারমর্ম প্রাধান্য পেতে থাকবে। একেবারে স্লো পয়জনিং যেটাকে বলে।

তিনি বলেন, পড়া শেষ করে সেই বই ফেরত দেয়া যাবে না। অভিযুক্তই বইটির মালিক হয়ে যাবে এবং যত্ন করে বাসায় রেখে দেবে। ছেলেমেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও বাসায় বই দেখে হয়তো ভবিষ্যতে কখনো না কখনো পড়তে আগ্রহী হবে।  অভিযুক্তই একই একটি নতুন বই কিনে লাইব্রেরিতে জমা দেবে। পড়াশেষে উপন্যাসের গল্পটি ছোট করে নিজের মত করে রচনাকারে লিখে আনতে হবে এবং গল্পটি সে জানে কি না, তা তাকে মৌখিকভাবে অল্পসময়ের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মৌখিক পরীক্ষা নেবো আমি এবং আমার কলিগ। আর বুঝতেই পারছেন, না পড়ে কিন্তু আমাদের পরীক্ষক হওয়া যাবে না। কাজেই পাঠক চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়বে পরীক্ষায় ডাব্বা মারলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? ওয়ান-প্লাস রেফার্ড সিস্টেম ব্যবস্থা থাকবে। কোন কথাবার্তা ছাড়াই আগের বইয়ের সাথে নতুন আরেকটা বই ধরিয়ে দিয়ে আবার একসপ্তাহ সময় দেয়া হবে। এবং এভাবে তার মাথায় বইয়ের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।

এই ম্যাজিস্ট্রেট জানান, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ থেকেই যাচ্ছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ অনেকের মধ্যে যদি কেউ একেবারেই পড়াশোনা না জানে, কিংবা কেবল স্বাক্ষর সর্বস্ব হয়, তারা পড়বে কিভাবে? উত্তর একেবারেই সহজ। তারা পড়বে না, পড়তে পারা শিখবে। তাদের জন্য ‘বাল্যশিক্ষা’ পর্যায়ের বই-পুস্তক থাকবে।