Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রতিবন্ধী প্রত্যয়ের বিস্ময়কর প্রতিভা

rangpur-otistic-studentঅদম্য ইচ্ছা আর দৃঢ় মনোবল থাকলেই যে অনেক কিছু করা সম্ভব এর উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্তের নাম ‘প্রত্যয়’। তার বেড়ে ওঠাও অন্যদের মতো স্বাভাবিক না। পরিবারে অভাব না থাকলেও অনেক কাঠখড় পুড়ে তাকে আসতে হয়েছে এতদূর। তবে এখানেই থামতে চায় না, সে যেতে চায় আরও বহুদূর। সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে পৌঁছাতে চায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষে।

রংপুরের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বাপ্পী ও শাহানাজ চৌধুরী দম্পতির বড় ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী খন্দকার খাদেম হোসেন প্রত্যয় বুঝিয়ে দিয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। মানুষের আছে সৃজনী শক্তি। জন্মাবার পর থেকেই মানুষ শিখতে-জানতে শুরু করে। শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে সব সম্ভবের দিকে। তেমনি অসম্ভব কিছু প্রতিভা রপ্ত করে রীতিমতো সবাইকে অবাক করে তুলছে বিস্ময়কর এ কিশোর।

chardike-ad

বিগত বছরের যে কোনো দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যয় এক নিমিষেই বলে দিতে পারে ওইদিন কী বার ছিল। শুধু তাই না, ইংরেজি সালের ওইদিন বাংলা ও আরবি সনের কত তারিখ, কত সাল তাও বলতে পারে সে। এমনকি আগামী বছরের দিন-তারিখ, বার ও কবে থেকে রমজান শুরু সে হিসেব করতেও তাকে ক্যালেন্ডার দেখতে হয় না। এর পাশাপাশি ছকি আঁকা ও কবিতা আবৃত্তিতেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে সে।

rangpur-otistic-studentপ্রত্যয়ের প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্ন দুয়ার যেন খুলেছে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে। স্থানীয় শিশু নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.৪৪ পেয়েছে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে প্রত্যয় জানায়, সে চিকিৎসক হয়ে গ্রামে গিয়ে অসহায় ও গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। যেন সব বাঁধা ডিঙিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারে সেজন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছে প্রত্যয়।

স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন প্রত্যয়ের মা শাহানাজ চৌধুরী। ছেলের শারীরিক সমস্যার কারণে ৫ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেন। ছোট ছেলে খন্দকার তৌফিক হোসেন রাইয়ান রংপুর জিলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।

rangpur-otistic-studentশাহানাজ চৌধুরী জানান, জন্মের এক বছর পরও তাকে ডাকলেও সাঁড়া দিত না। চার বছর পর একটা-দুইটা শব্দ বলতো। এরপর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে প্রত্যয়ের ব্রেইন এর সমস্যা ধরা পড়ে। প্রত্যয় ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আর পরিবারে শঙ্কাও বাড়তে থাকে।

চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে কাউন্সিলিং ও নিয়মিত সেবাযত্ন করার মধ্য দিয়ে দিন পারি দিতে হয়। আর এ কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

শাহানাজ চৌধুরী জানান, প্রত্যয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলেও পড়াশোনার বিষয়ে তার আগ্রহ অনেক। প্রতিদিন তাকে নিয়ে স্কুলে যেতেন তিনি। ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে বসে থাকতেন। এসএসসি পরীক্ষা শেষে বসে থাকতে চায়নি বলে তাকে কম্পিউটার ও ইংলিশ স্পোকেন কোর্সে ভর্তিও করে দিয়েছিলেন।

আইনজীবী খায়রুল ইসলাম বাপ্পী জানান, ছেলের এ ফলাফলে পরিবারের সবাই খুশি। তবে এইচএসসিতে ভর্তি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। প্রতিবন্ধী কোঠা না থাকায় প্রত্যয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি-না তা ভাবিয়ে তুলছে তাকে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ