হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তি করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গতকাল সোমবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন গৌতম কুমার এডবর নামে রাজধানীর ভাষানটেকের এক সমাজসেবক।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৮ মিনিটে তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন ব্যারিস্টার সুমন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমার নামে ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে চিন্তায় আমি বিগত ২৮-০৫-২০১৯ তারিখে ঢাকার শাহবাগ থানায় বিভিন্ন ভুয়া পেজের নাম উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করি যার নম্বর হচ্ছে ১৭০৯। ভুয়া পেজ ব্যবহার করে আজকে যে মামলাটি আমার বিরুদ্ধে করা হলো এটি একটি বড় ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি। আমার জিডির কাগজটি আপনাদের সম্মুখে দিলাম। আমার বিশ্বাস সৎ পথে থাকলে আল্লাহ সহায় হবেন এবং সকল ষড়য্ন্ত্র নস্যাৎ হবে।’
স্ট্যাটাসের নিচে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) একটি কপি সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
আমার নামে ভুয়া ফেইসবুক পেইজ খুলে আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে চিন্তায় আমি বিগত ২৮-০৫-২০১৯ইং তারিখে ঢাকার শাহবাগ…
Posted by Barrister Syed Sayedul Haque Suman on Monday, July 22, 2019
ব্যারিস্টার সুমনের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন ফেসবুকে বলেন, পৃথিবীর মধ্যে নিকৃষ্ট এবং বর্বর জাতি হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী, যাদের ধর্মের কোনো ভিত্তি নেই। মনগড়া বানানো ধর্ম। হয়তো দু-একটি খবর নিউজে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আরও অনেক ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়, তাদের নৃশংসতার আড়ালে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৯ জুলাই সনাতন ধর্ম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে মিথ্যা, অশ্লীল চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ফলে হিন্দু সমাজ তথা গোটা জাতির মধ্যে এ বিষয় নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আসামির এরকম আচরণ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অশ্লীল অবমাননাকর ও অরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ফলে রাষ্ট্র ও হিন্দু সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। আসামির এ ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের ফলে সাধারণ জনগণ নীতিভ্রষ্ট, অসৎ হইতে উদ্ধত হওয়ায়র ফলে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সুমন আগে থেকেই বলে আসছেন তার এ ফেসবুক আইডিটি ফেক। তিনি গত ২০ জুলাই তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার নাম ব্যবহার করে একটি ফেক পেজ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। আমি এ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। আপনারা সচেতন থাকবেন। এটাই আমার একমাত্র পেজ, যার ফলোয়ার ২০ লাখের অধিক।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে পৃথক আইনে মামলার প্রস্তুতির কথা রোববার (২১ জুলাই) জানান বাদী হিন্দু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি সুমন কুমার রায়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেই বিষয়টি জানান। পরে মামলার প্রস্তুতির বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন বলেন, পৃথক দুটি ধারায় এ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে সুমন কুমার রায় বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে একটি এবং মানহানির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে দুই ধরনের অভিযোগ আনার সুযোগ আছে। একটি ২৯৫ (ক) ধারায়। অপরটি ফেসবুক লাইভে মানহানি করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধিত ধারায় অভিযোগ আনা হবে।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘মামলা করা একটি সাংবিধানিক অধিকার। যে কেউ কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এটাই বাংলাদেশের নিয়ম হওয়া উচিত।’
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের করা মামলা খারিজ করে দেন আদালত।
রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
পেনাল কোডের ১২৩ (এ), ১২৪ (এ) ও ৫০০ ধারায় মামলাটি আমলে নেয়ার জন্য ব্যারিস্টার সুমন আদালতে আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পরে খারিজের আদেশ দেন।
এর আগে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাতে ফেসবুক লাইভে এসে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমি তার বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করব, আপনারা আমার পাশে থাকবেন।’