Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সফল ব্যক্তিদের অদ্ভুত যত ঘুমের অভ্যাস

office-chairs-you-can-sleep-in
প্রতীকী ছবি

এমন অনেকেই আছেন যাদের ঘুমানোর অভ্যাস একটু ভিন্ন ধরনের। আবার উদ্ভটও বলা যেতে পারে। বিশ্বের সফলতম ব্যক্তিদের মধ্যেও এরকম অভ্যাস লক্ষণীয়।

* উপন্যাসের আইডিয়া: তৎকালীন ঐতিহাসিকদের মতে, লেখক চার্লস ডিকেন্স নিদ্রাহীনতায় ভুগতেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অনেক বিখ্যাত লেখা লিখে গেছেন। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি একপ্রকার কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন। তার বিশ্বাস ছিল উত্তর দিকে মুখ করে ঘুমানোর ফলে তার লেখার উপর সেটার প্রভাব পড়ে। তার লেখার চমকপ্রদ ব্যাপারগুলো নাকি উত্তর দিকে মুখ করে ঘুমানোর ফলে হতো।

chardike-ad

* চার ঘণ্টার ঘুম: উদ্যোক্তা, লেখক ও ম্যাগাজিন প্রকাশক মার্থা স্টুয়ার্ট বলেন, তিনি রাতে মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে সারাদিনের কাজসহ সবকিছু সামলে নিতে পারেন। তিনি বলেন, ব্যবসা এবং অন্যান্য কাজে তাকে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয় এবং এ কারণে তিনি ঘুমানোর সময় পান না। তিনি আরো বলেন, ‘যদিও আমার জীবন খুবই ক্লান্তিকর, তবুও আমি ঘুমকে গুরুত্ব দিয়ে কাজের ক্ষতি করি না। দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার বাড়িতে সবাই মোটামুটি সাড়ে ছয়টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠে এবং আমাকে তারও আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়।

* গোল্ড মেডেলিস্টের ঘুম পদ্ধতি: অলিম্পিক সাঁতারু ও গোল্ড মেডেলিস্ট মাইকেল ফেলপসের শুধু পর্যাপ্ত ঘুম যথেষ্ট নয়, বরং নিখুঁত পর্যায়ের ঘুম প্রয়োজন। তিনি বিশুদ্ধ বাতাস এবং অক্সিজেনপূর্ণ একটি চেম্বারে ঘুমান যেখানে পর্যাপ্ত ঘুমের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা আছে। ২০১২ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার আগে মার্কিন এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি বিশেষ চেম্বারে ঘুমাতেন। এভাবে ঘুমানোর ফলে মাইকেলের দেহে প্রচুর লাল রক্তকণিকা তৈরি হতো এবং তার দেহে অক্সিজেন প্রবাহ বেড়ে যেত, যা একজন সাঁতারু হিসেবে তার খুবই প্রয়োজন।

* সুদীর্ঘ ঘুম: পপ সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেত্রী মারিয়া ক্যারি তার কন্ঠ ঠিকঠাক রাখার জন্য ১৫ ঘণ্টার সুদীর্ঘ ঘুম ঘুমান। তাছাড়া তার শোবার ঘরে তিনি প্রচুর আর্দ্রতা পছন্দ করেন। তিনি তার বিছানার চারপাশে ২০টির মতো আর্দ্রতা দানকারী মেশিন বসিয়ে রেখেছেন, যার ফলে তার শোবার ঘরে সবসময় প্রচুর আর্দ্র বাতাসের উপস্থিতি থাকে এবং তিনি বেশি সময় ধরে ঘুমাতে পারেন।

* লেখার অভ্যাস: গায়িকা ও গীতিকার কেলি বর্তমানে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতজগতে এক উজ্জ্বল নাম। ঘুমানোর আগে তিনি যদি গান না লিখেন তাহলে তার ঘুমের সমস্যা হয়। তিনি বলেন, ‘একবার যদি নতুন কোনো লেখা মাথায় আসে তাহলে তা না লিখে আমি ঘুমাতে পারি না এবং এজন্য ঘুমের মধ্যেও আমার অনেক সমস্যা হয়। নিখুঁত, নির্ভেজাল ঘুম আমি ঘুমাতে পারি না। কেননা বেশিরভাগ নতুন নতুন লেখা রাতের বেলা মাথায় আসে।’

* বালিশ রহস্য: বিখ্যাত লেখক স্টিফেন কিং ঘুমানোর জন্য এক অদ্ভুত পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তিনি ঘুমানোর আগে ব্রাশ করেন এবং নিজের দুই হাত ভালো করে ধুয়ে নেন। তাছাড়া বিশেষ এক অবস্থানে বালিশ না রাখলে তিনি ঘুমাতে পারেন না। তিনি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার আগে দুই হাত ধোয়া এবং বালিশের অদ্ভুত অবস্থান পছন্দ করেন।

* নাক ডেকে ঘুম: বিখ্যাত তারকা টম ক্রুজের রয়েছে প্রচুর শব্দে নাক ডেকে ঘুমানোর অভ্যাস। তার বাসভবনে শুধুমাত্র নাক ডেকে ঘুমানোর জন্য একটি কক্ষ তিনি আলাদা করে রেখেছেন। কক্ষটি পুরোপুরি শব্দপ্রতিরোধী। তার নাক ডাকার শব্দ যেন অন্য কাউকে বিরক্ত না করে এজন্য তার এই আয়োজন। কেটি হোমসকে বিয়ে করার পর টম তার বাড়িতে এই বন্দোবস্ত করেছিলেন, যাতে তারা দুজনেই শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।

* ঘুমের অপব্যয়কারী: টমাস আলভা এডিসন একজন বিখ্যাত আবিষ্কারক ছিলেন বটে, তবে তিনি ঘুমের ব্যাপারে ছিলেন প্রচন্ড রকমের উদাসীন। তিনি প্রচুর চিন্তাভাবনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন এবং ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করার মতো কাজ তিনি করতে চাইতেন না। তিনি কাজের ফাঁকে হালকা তন্দ্রাভাবাচ্ছন্ন হয়ে বসে বা শুয়ে থাকতেন এবং এভাবেই তিনি ঘুমকে এড়িয়ে গেছেন বছরের পর বছর।

* জানালায় অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল: জনপ্রিয় র‍্যাপ গায়ক এমিনেম ঘুমজনিত নানারকম সমস্যার শিকার এবং তিনি ঘুমানোর সময় ঘরের জানালা অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল দিয়ে আবৃত করে দেন যাতে ঘরে কোনোরকম আলো প্রবেশ না করে। তিনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকেন না কেন ঘুমের জন্য এ ধরনের বন্দোবস্ত তার লাগবেই। তাছাড়া পুরোপুরি ঘুমের জগতে হারিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি হালকা সংগীত শুনতে পছন্দ করেন।

* নিয়মতান্ত্রিক ঘুম: টেসলা এবং স্পেসএক্স কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক খুবই ব্যস্ত সময় পার করেন। তবে কাজের ব্যাপারে তিনি যতটা গুরুত্ব দেন, ঠিক ততটাই গুরুত্ব দেন ঘুমের ব্যাপারেও। তিনি নিয়মিত রাত ১টা থেকে সকাল ৭টা অবধি ঘুমান এবং তার এই নিয়মিত সময়ের কোনো হেরফের হয়না। তাছাড়া কাজের চাপ বেশি থাকলে তিনি সঙ্গে একটি স্লিপিং ব্যাগ রাখেন এবং সুযোগ বুঝে ঘুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সেরে নেন।

* বৃষ্টির শব্দে ঘুম: একজন অভিনেতা, লেখক এবং কৌতুকাভিনেতা হিসেবে ডব্লিউ সি ফিল্ডের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু তিনিও ঘুমজনিত সমস্যার শিকার ছিলেন। সমস্যাটি হল, তিনি বৃষ্টির শব্দ না শুনে ঘুমাতে পারতেন না। এ কারণে ঘুমের সুবিধার্থে তিনি কৃত্রিমভাবে বৃষ্টির শব্দ তৈরীর বন্দোবস্ত করতেন।

* শিল্পীর পদ্ধতি: বিখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি অদ্ভুত এক উপায় অনুসরণ করতেন ঘুমানোর জন্য। তিনি ৪ ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট করে ঘুমিয়ে নিতেন। এভাবে সময় বাঁচিয়ে বিখ্যাত বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম তৈরি করে রেখে গেছেন তিনি। তবে এভাবে ঘুমানো কোনোমতেই স্বাস্থ্যকর নয় বলে মনে করেন অনেক গবেষক। এভাবে ঘুমিয়ে ঘুমের পরিপূর্ণ তৃপ্তি এবং জীবনের আনন্দ উপভোগ করা সম্ভব নয়।

* হাঁটার পর ঘুম: ব্রিটিশ লেখিকা এমিলি ব্লন্ট নিদ্রাহীনতা রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং সবসময় ঘুমের জন্য মরিয়া হয়ে থাকতেন। তিনি ঘুমানোর আগে ডাইনিং রুমের টেবিলের চারপাশে গোল বৃত্তাকারে হাঁটা শুরু করতেন। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর তার ঘুম আসতো। তার আপন বোন শারলোট ব্লন্ট একই রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং বোন এমিলির মতো একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘুমাতেন।

* স্বল্প সময়ের ঘুম: শুনতে অদ্ভুত বলে মনে হলেও স্যার আইজাক নিউটন মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমাতেন। বাকি ২২ ঘণ্টা তিনি তার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তার আশ্চর্য সব আবিষ্কারে আমরা বিস্মিত হলেও, এই মানুষটি ঘুম এবং বিশ্রাম সবকিছু বিসর্জন দিয়ে কাজ করে গেছেন।

* ঘুমের নিয়ম: বিশ্বের অন্যতম সফল নারী অপরা উইনফ্রে। তার এই সফলতার পেছনে রয়েছে সঠিক বিশ্রাম। একজন সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে ঘুমের ক্ষেত্রে তার রয়েছে বিশেষ এক নিয়ম। তিনি ঘুমানোর আগে গোসল করেন, তারপর ঘুমাতে যান। তার মতে এটা ঘুমানোর নিয়ম। গোসল করার জন্য তার আবার রয়েছে নানান পদ্ধতি।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট, সৌজন্যে: রাইজিংবিডি