গ্রামের সবাই হিন্দু, নেতা নির্বাচন করলো মুসলিমকে

hindu-muslimহিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ভারতের কাশ্মীর রাজ্যে সনাতন ধর্মাবল্বীরা সবাই মিলে চৌধুরী মুহাম্মাদ হোসাইন (৫৪) নামে এক মুসলমানকে তাদের নেতা বানিয়েছে। কাশ্মীরে সুদীর্ঘকাল ধরে চলছে স্বাধীনতা সংগ্রাম।

বুরহানুদ্দিন ওয়ানির মতো বিপুল জনপ্রিয় তরুণ মুজাহিদকে জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কাশ্মীরে যদিও স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে; কিন্তু মুসলিমরা একদিকে যেমন এ যুদ্ধকে ‘গাযওয়ায়ে হিন্দ’ এর যুদ্ধ বলে প্রচারণা চালান, একইভাবে মিডিয়াও এমনভাবে প্রচার করে, যেন কাশ্মীরের স্বাধীনতা ধর্মীয় কারণে শুধু মুসলমানদেরই দাবি। হিন্দু-শিখ-বৌদ্ধসহ অন্য জনসাধারণ নিতান্তই নিরীহ এবং তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এ জিহাদ।

একইভাবে এটাই মনে করা হয়, জিহাদ মানেই অমুসলিমদের কতল করা। অথচ জম্মু ও কাশ্মীরের লোকসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার। এর মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ২৮.৪৩ ভাগ। মানে ৩৫ লাখ ৬৫ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে জম্মুতে মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুদের সংখ্যাই বেশি। হিন্দু জনগোষ্ঠী সেখানে প্রায় ৬৩ ভাগ এবং মুসলিম ৩২ ভাগ। গোটা অঞ্চলে শিখসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীও আছে প্রায় ৩ লাখ।

ভারতে শতাব্দীকাল ধরে যেমন ভয়াবহ দাঙ্গার ইতিহাস আছে এবং হিন্দুদের বাহুবলে মুসলিম জনগোষ্ঠী যেভাবে নাস্তানাবদু হয়েছে, সে হিসেবে কাশ্মীরে জিহাদিদের প্রধান টার্গেট হওয়ার কথা ছিল সেখানকার হিন্দুরা। যেমনটা আমরা আসাম কিংবা মিয়ানমারের প্রসঙ্গ এলেই বাংলাদেশের হিন্দু বা বৌদ্ধদের কতটা ছাড় দেওয়া যৌক্তিক হবেÑ সে কথা ভাবি। কাশ্মীরে কিন্তু তেমন হয়নি এবং সচরাচর হয়ও না। বরং আমার মনে হয়, মুসলিমদের আধিপত্যও সে অঞ্চলে এমনিতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বরং নিজেদের চরিত্রগুণেই মুসলিম জনগণ সেখানে অনন্য মর্যাদা পেয়ে এসেছেন।

বেশ কয়েকদিন আগে ‘ভ্রমণ’ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় এক হিন্দু লেখকের কাশ্মীর ভ্রমণ কাহিনি পড়েছিলাম। দিকহারা-পথহারা অবস্থায় একটি মুসলিম পরিবারে তিনি কী দারুণ সমাদর পেয়েছেন লেখক সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।

সংবাদমাধ্যম দৈনিক গ্রেটার কাশ্মীর সূত্রে প্রকাশ, কিন্তু কাশ্মীরের এবারের ঘটনাটি এসব ঔদার্যের উদাহরণকে ছাড়িয়ে শিখরে উঠে গেছে। যদিও ভেলান-খারোথি ছোট্ট একটি গ্রাম, কাশ্মীরের ডোডা জেলায় ভাদেরওয়া শহরের ১০ কিলোমিটার দূরে যার অবস্থান। এ গ্রামে মাত্র ৪৫০টি পরিবারের বসবাস। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলোÑ একটি পরিবার ছাড়া সবাই অমুসলিম। কিন্তু এ মুসলিম পরিবারের কর্তা চৌধুরী মুহাম্মাদ হোসাইনকে (৫৪) গ্রামবাসী তাদের পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত করেছে। এ নির্বাচনও হয়েছে ঘটা করে আরএস পুরা সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে।

মুহাম্মাদ হোসাইন মূলত গুজ্জার বংশীয় লোক; যারা ঐতিহাসিকভাবেই কৃষিকাজ ও গবাদিপশু পালনে অভ্যস্ত। তিনি পাঁচ ছেলে, এক পুত্রবধূ ও স্ত্রীসহ ভেলান গ্রামে থাকেন। তার আরও চারটি মেয়ে আছে, সবাই বিবাহিত।

হোসাইনকে কেন তাদের সর্বসম্মত পছন্দ? সে সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য এলাকার মানুষ মিডিয়াকে জানিয়েছেন। সন্দেহ নেই, এখানে চৌধুরী মুহাম্মাদ হোসাইনের কৃতিত্ব অনেক, যেহেতু একজন মুসলিম হিসেবে এতগুলো অমুসলিম পরিবারের মধ্যে আস্থা অর্জন করতে পারা কম কথা নয়! একই সঙ্গে তার অমুসলিম প্রতিবেশীদের গুণগুলোও মহত্ত্বের দাবিদার।