Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

luggageঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ পাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই।এ ভোগান্তি লাঘবে উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে যাত্রীদের ভোগান্তি সেভাবে কমেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে লাগেজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে টোকেন চালু করা হয়েছে। ফলে একজনের লাগেজ অন্যজনের কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটিই কঠোর নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে।

জানা যায়, বিদেশ থেকে ফেরার সময় দেশে প্রিয়জনের জন্য লাগেজ ভর্তি নানা ধরনের মালামাল নিয়ে আসেন প্রবাসীরা। অথচ লাগেজ পাওয়ার ভোগান্তির কারণে দীর্ঘদিন পর দেশে আসার আনন্দ অনেক সময় ম্লান হয়ে যায়। প্লেন থেকে নামার কয়েক ঘণ্টা পরও মেলে না লাগেজ। মাঝে মধ্যে মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে অনেক সময় অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি ভুক্তভোগী যাত্রীরা।

chardike-ad

সম্প্রতি লাগেজ পাওয়ার বিষয়ে তদারকি বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এখন লাগেজ পেতে বোর্ডিং পাসের সঙ্গে যুক্ত টোকেনও লাগবে। টোকেন ছাড়া কেউ লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে যেতে পারেন না।

নাম প্রকাশে একাধিক কর্মী জানান, টোকেন দেখে লাগেজ দেয়ার নিয়ম থাকলেও আগে সেভাবে এটি মানা হতো না। তবে এখন যাত্রীদের হয়রানি লাঘবে বেশ কঠোর ওই নিয়ম মানা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, উড়োজাহাজ থেকে টু-ট্র্যাক্টর (লাগেজ সরবরাহ যান) থেকে লাগেজ কনভেয়ার বেল্টে ফেলা হচ্ছে। এখান থেকে যাত্রীরা নিজের লাগেজ শনাক্ত করছেন। এরপর তা বোর্ডিংপাসে থাকা টোকেন দেখে নিশ্চিত হওয়ার পরই লাগেজের ছাড় দেয়া হচ্ছে। যাত্রীর বোর্ডিংপাসের সঙ্গে থাকা টোকেন না মিললে আটকে দেয়া হচ্ছে লাগেজ।

সম্প্রতি আমেরিকা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরেছেন শরিফুল ইসলাম সুমন নামে একযাত্রী। তিনি নিজেও টোকেন দেখে নিজের লাগেজ সংগ্রহ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উদ্যোগটা ভালো। এটা না করলে কে কখন কার লাগেজ নিয়ে যায় তার কোনো ঠিক থাকে না। তবে এখনও অনেক সময় লাগেজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই সিস্টেমটা আরো দ্রুত করা দরকার।

‘বিমানবন্দরের দুর্বল গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কারণে লাগেজ পেতে দেরি হয়। অনেক সময় লাগেজ কেটে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল বের করে নেয়া হয়। এসবের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত ধরে জেলে ভরা উচিৎ,’ যোগ করেন এই যাত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে টোকেন দেখে লাগেজ দেয়ার কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তারপরও যাত্রীদের ভোগান্তি থেমে নেই। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাত্র ৮টি কনভেয়ার বেল্ট রয়েছে।
এসব কনভেয়ার বেল্টে সমস্ত লাগেজ খালাস হচ্ছে না। ফলে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমান চাহিদা অনুসারে বিমানবন্দরে দৈনিক ২০ থেকে ২৫টি টু-ট্র্যাক্টর প্রয়োজন, সেখানে আছে নামে মাত্র ক’টি। আর এগুলো দিয়েই কোনো মতে কাজ চালানো হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, বিমানবন্দরে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপগামী যাত্রীদের। এসব দেশ থেকে সরাসরি ঢাকার ফ্লাইট নেই বললেই চলে।

অধিকাংশ সময় এই রুটের যাত্রীদের সৌদি আরব, দুবাই, জেদ্দা ও কাতারে ট্রানজিট থাকে। কানেক্টিং ফ্লাইটে সৌদি আরব, কাতার ও দুবাই থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশে ফেরেন। ফলে তাদের লাগেজ উপরে পড়ে যায়। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যাত্রীদের লাগেজ চলে যায় নিচে। এ কারণে লাগেজ পাওয়া নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমেরিকা ও ইউরোপের যাত্রীদের।

যোগাযোগ করা হলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মোকাব্বির হোসেন বলেন, কখন কোন উড়োজাহাজে কী পরিমাণে লাগেজ আসে আমরা তদারকি করি। এরপরও জনবল ও অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে কিছু সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে কিছু করারও থাকে না। ফলে লাগেজ পেতে দেরি হয় যাত্রীদের। লোকবল ও কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

মোকাব্বির হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি সবসময়ই মনিটারিং করছি। বড় এয়ার ক্র্যাফটের লাগেজ খালাস হতে ৩০ থেকে ৭০ মিনিট সময় লাগে। কারণ এসব এয়ার ক্র্যাফটে ২২ থেকে ২৮টি কন্টেইনার থাকে। ট্রানজিটের টেকনিক্যাল সমস্যাও আছে।

এ বিষয়ে তার ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার সরাসরি ফ্লাইট নেই। ফলে অনেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৌদি আরব, দুবাই, তুরস্ক ও কাতার হয়ে ঢাকায় আসেন। এসব যাত্রীর লাগেজ কন্টেইনারের নিচে পড়ে যায়। এক্ষেত্রে দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তি হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে বিমানবন্দরে ৮টির বেশি কনভেয়ার বেল্ট স্থাপন করা যাচ্ছে না। সেই সুযোগও নেই। ফলে এখন আমাদের মনিটারিং জোরদার ও জনবল বৃদ্ধি ছাড়া কোনো পথ নেই। তবে থার্ড টার্মিনালের কাজ হয়ে গেলে লাগেজ পেতে যাত্রীদের আর কোনো ভোগান্তি থাকবে না।

সৌজন্যে- বাংলানিউজ