Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

keuba-muslim-womenকিউবার রাজধানী পুরনো হাভানার বিভিন্ন রাস্তায় মনোরম পরিবেশে বোরকা ও হিজাব পরে হাঁটতে দেখা যায় মুসলিম নারীদের। আর সেথানে দিন দিন বাড়ছে এর সংখ্যা। সেখানে ধর্মচর্চা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে নারী-পুরুষদের। ইসলামের আলোয় রীতি-নীতি ভালোভাবেই মেনে চলার চেষ্টা করছে কিউবার নারী-পুরুষরা। জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ মুসলিম বসবাস করছে এখন কিউবায়। নিরবে ইসলামের প্রসার হচ্ছে সেখানে। অন্য ধর্মের মানুষগেুলো আস্তে আস্তে ভিড়ছে ইসলামের পতাকা তলে। তবে ইসালামের দীক্ষায় সেখানে নারীদের জন্য হালাল খাবার খুঁজে পাওয়া এবং পুরো দেশে একটি মাত্র মসজিদ থাকার কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে অসুবিধায় পড়তে হয়।

অনেক সমস্যার মাঝেও সেখানে নরীদের মধ্যে বড়ছে ধর্মে-ধর্মান্তরিত হওয়ার দৃশ্য। ইসলামের চোখ জুড়ানো ভ্রাতৃত্ব তাদের নতুর করে ভাবাতে শুরু করে। নতুন বিশ্বাসকে গ্রহণ করে: আধ্যাত্মিক উদ্ঘাটন, ধর্মীয় কৌতূহলের কারণে মুসলিমদের সাথে অংশ নেয় অন্য ধর্মের নারীরা। আর এভাবেই বেড়ে চলছে দ্বীনের প্রচার।

chardike-ad

২৭ বছর বয়সী মরিয়ম ক্যামেজো পেশায় একজন সাংবাদিক। যিনি সাত বছর আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী মহিলাদের এবং বিশেষত কম বয়সী মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে।

মরিয়ম স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে গভীরভাবে জড়িত এবং হাভানার মসজিদে আরবি এবং কুরআন ক্লাস পাঠদান করান। যা ২০১৫ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ৩৫ বছর বয়সী ইসৌরা আরগুদিন বলেন, দ্বীপে “জ্ঞান” না থাকার কারণে তিনি কিউবার মুসলিম মহিলা হিসাবে অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিউবার ইসলামিক লীগের মতে, ১ হাজার ২শ’ জন মহিলাসহ প্রায় ১০ হাজার মুসলমান রয়েছে সেখানে। মসজিদ নেই সেই দেশ মুসলমানদের জন্য ভ্রাতৃপ্রতীম নয় এ কথা অনস্বীকার্য। আর খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কিউবায় মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.১ ভাগ।

সত্তর ও আশির দশকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিউবায় পড়তে আসা কিছু ছাত্র ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। ইসলামের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কিউবার স্থানীয়রা ইসলাম গ্রহণ করা শুরু করেন। এভাবেই ধীরে ধীরে ইসলামের প্রচার বেড়ে যায়। কিউবার দুটি মুসলিম সংগঠন (অরাজনৈতিক) ইসলাম প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে।

মসজিদ না থাকায় কিউবার মুসলিমরা সাধারণত বাড়িতেই তাদের ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন। কারণ কিউবায় জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়ার জন্য নেই কোনো মসজিদ। তবে হাভানায় ‘আরব হাউজ’ নামে একটি ইমিগ্রান্ট ভবনে (বর্তমানে এটি যাদুঘর ও রেস্টুরেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত) শুধু জুমার নামাজ পড়ার জন্য কিউবা সরকার অনুমতি দিয়েছে। মাত্র তিন ঘন্টার জন্য খুলে দেওয়া হয় ভবনটি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ঐখানে নামাজ পড়তে পারবে শুধু যারা নন-কিউবান মুসলিম তারা। কিউবার মুসলিমদের ক্ষেত্রে সে অনুমতিও নেই।

হাভানার বাইরে কিউবার উপকূলীয় শহর আলমারায় প্রতি শুক্রবার খেলার মাঠে গুটিকয়েক মুসলিম জুমার নামাজের জন্য জড়ো হন। তারা যখন খেলার মাঠে নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যান, তখন তাদের পাশ দিয়ে বিকিনি পড়ে হেঁটে যায় মেয়েরা। মদের বোতল হাতে পার্কে বসে থাকা যুবক তাকিয়ে দেখে নামাজ পড়ার দৃশ্য। এদেশে যৌনতা, মদ এবং শুকরের মাংস ডাল-ভাতের মতো।

ভাবা যায়, মুসলিমদের কতটা কষ্ট স্বীকার করে সেখানে চলতে হয়।পৃথিবীতে আর কোনো সম্প্রদায়ের তাদের জীবনবিধান মেনে চলতে গিয়ে এমন কষ্ট স্বীকার করতে হয় কিনা আমার জানা নেই। অথচ সেই ইসলামকে প্রগতিশীল দাবিদার তথাকথিত সুশীলরা বলে বেড়ায় ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম। যাদের কারনে ও যাদের প্রচার-প্রচারণায় ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে আজ জাহির করা হচ্ছে- এ দুপক্ষের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। কিউবায় না-আল্লাহতে বিশ্বাসীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবু তারা আল্লাহতে বিশ্বাসীদের কখনো আঘাত দিয়ে কথা বলে না আমাদের দেশের তথাকথিত না-আল্লাহতে বিশ্বাসীদের মতো।

কিউবায় মুসলিম জীবনাচার মেনে চলা কষ্টকর হলেও স্থানীয়রা যথাসম্ভব তাদের সহায়তা করেন। বিশেষ করে হালাল খাবার খুঁজে পেতে তাদের অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়।সমগ্র কিউবায় মুসলিমদের জন্য কোনো হালাল মাংসের দোকান নেই।

উল্লেখযোগ্য দুজন কিউবান নওমুসলিম: আলী নিকোলাস কোসিও, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী, বর্তমানে তিনি ‘ভয়েস অব ইসলাম’ নামের একটি রেডিও স্টেশনে সাংবাদিকতা করছেন। জুয়ান কার্লোস গোমেজ, সাবেক বিখ্যাত কিউবান বক্সার।