Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৩৭ শ’ কোটি টাকা দিয়ে ‘ভুয়া’ চিত্রকর্ম কিনেছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স?

fake-scultureবিশ্বখ্যাত চিত্রকর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি ‘ভুয়া’ চিত্রকর্মের পেছনে প্রায় ৪৫ কোটি ডলার বা ৩৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স। বৃটেনের মিরর পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে। খবরে বলা হয়, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘দ্য সালভাতর মুন্দি’ শীর্ষক লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ওই কথিত চিত্রকর্ম বিক্রি হয়। তখন বলা হয়েছিল, ওই ইতালিয়ান চিত্রকরের জ্ঞাত ২০টি চিত্রকর্মের মধ্যে এটি একটি। প্রথমে ক্রেতার নাম গোপন থাকলেও পরে জানা যায় যে, এটি কিনেছিলেন প্রিন্স বদর বিন আবদুল্লাহ আল সৌদ। ধারণা করা হচ্ছিল, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষে ওই চিত্রকর্ম ক্রয় করেন স্বল্পপরিচিত প্রিন্স বদর।

এই চিত্রকর্ম নিয়ে একটি বইও লিখেছেন শিল্প ইতিহাসবিদ বেন লুইস। তিনি দাবি করেন, প্রথম দিকে ৩৭ কোটি ডলার দিয়ে ওই চিত্রকর্ম কিনতে চেয়েছিল সৌদ পরিবার। কিন্তু কাতারি রাজপরিবারের কেউ এটি বেশি দামে কিনতে চাইছে এমনটা অনুমান করে সৌদি যুবরাজ দাম বাড়িয়ে ৪০ কোটি ডলারের উন্নীত করেন। পরে জানা যায়, কাতারি রাজপরিবার নয়, বরং চীনা বিলিয়নিয়ার লিউ ইকিয়ানও ওই চিত্রকর্ম কেনার জন্য বেশি দাম হাঁকিয়েছিলেন। অবশেষে ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে এটি কেনেন সৌদি যুবরাজ। তখনই এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি চিত্রকর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

chardike-ad

২০১১ সালে লন্ডনের ন্যাশনাল গ্যালারিতে ভিঞ্চির বিভিন্ন চিত্রকর্মের সঙ্গে এটিও প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু তখন থেকেই এই পেইন্টিং-এর মূল্য নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠা শুরু হয়। এই চিত্রকর্মে অতিরিক্ত ‘পেইন্টিং’ ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনরুদ্ধার করার অতিরিক্ত চেষ্টা চালানো হয়। ফলে এটি মূল চিত্রকর্মের চেয়ে অনেকাংশেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। এ কারণে এটি বিশ্লেষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই চিত্রকর্ম নিলামে উঠার আগের কয়েক মাস এর উৎস নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দা ভিঞ্চির ‘প্রকৃত’ কোনো শিল্পকর্মে হাত দেওয়ার নেশায় ওই দুই ধনকুবের নেমে পড়েন প্রতিযোগিতায়। কিন্তু অনেক শিল্প ইতিহাসবেত্তা এখনও এই শিল্পকর্ম আদৌ দা ভিঞ্চির কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, এতে এমন কিছু জিনিস আছে যা দা ভিঞ্চির মতো শিল্পির সঙ্গে যায় না।

পরবর্তীতে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এই শিল্পকর্ম দান করেন আবুধাবির ল্যুভর মিউজিয়ামে। কিন্তু প্রদর্শনের ঠিক ২ সপ্তাহ আগেই তা বাতিল করা হয়। তখনই গুঞ্জন ওঠে যে, এই বাতিল থেকে ইঙ্গিত মিলে যে, জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছে এটি ভিঞ্চির নয়, বরং তার কোনো শিষ্যের আঁকা চিত্রকর্ম।

এতেই সব শেষ হয়নি। সম্প্রতি প্যারিসের বিশ্বখ্যাত মূল ল্যুভর মিউজিয়াম গোপনে একমত হয়েছে যে, এই পেইন্টিং-এর উৎস দা ভিঞ্চির ‘কর্মশালা’। অর্থাৎ, সরাসরি দা ভিঞ্চি নয়; হয়তো তারই শিষ্যদের মধ্যে কেউ এটি এঁকে থাকতে পারেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি শিল্পকর্মটির দাম মারাত্মকভাবে কমে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফের নিলামে উঠানো হলে এর দাম ১৫ লাখ ডলার বা ১২ কোটি টাকার বেশি উঠবে না!

লুইস সম্প্রতি হে ফেস্টিভালে বলেছেন, ল্যুভরে আমার একাধিক সূত্র বলছেন যে, ল্যুভরের অনেক কিউরেটর বলছেন এটি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নিজের আঁকা নয়। তাই ল্যুভরে এটি যদি প্রদর্শিত হয়, তাহলে এটি দা ভিঞ্চির ‘ওয়ার্কশপ’-এর চিত্রকর্ম হিসেবেই প্রদর্শিত হবে। সুতরাং, এই চিত্রকর্মের মালিক এটি প্রদর্শিত হতে দেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, এতে এর দাম পড়ে যাবে বহুগুণ। অর্থাৎ এত সুন্দর একটি চিত্রকর্ম মানুষ দেখতে পাবে না। এটি যেন সৌদি আরবের সর্বশেষ রাজনৈতিক বন্দীতে পরিণত হয়েছে।