ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে ভারতে পেঁয়াজের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
আজ রোববার ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণ বিষয়ক মুখপাত্র সীতাশু কর বলেন, রফতানি নীতির সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রফতানিতে এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন এর একটা বড় প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়বে। শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভারত যদি পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তা দেশের বাজারে বড় রকমের প্রভাব ফেলবে। কারণ এখন পর্যন্ত পেঁয়াজের একমাত্র আমদানি উৎস ভারত। মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজের চালান এসেছিল, তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে আনার পথে। সরকার তুরস্ক ও মিশরের বাজারকে বিকল্প ভাবলেও বাস্তবতা হচ্ছে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
তিনি বলেন, আজ রোববার সকালেও প্রতি কেজি ভারতীয় ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কেজি। এখন শুনছি ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের কথা শুনেই এক ঘণ্টার ব্যবধানে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান। কালকের মধ্যেই এই দাম বাড়ার প্রভাব বাজারে পড়বে বলে তিনি জানান।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দিল্লির খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ রুপিতে, যা এক মাস আগেও ২০ থেকে ৩০ রুপি ছিল। ভারতের কোনো কোনো এলাকায় পেঁয়াজের দাম ৮০ রুপিতেও উঠেছে। আর টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে রোববার প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ভারত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে, যার একটি বড় অংশ এসেছে বাংলাদেশে। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মত। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। স্বল্প দূরত্ব আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগ ভারত থেকেই হয়।
ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়। আর ওই খবরে বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম এক লাফে বেড়ে যায় ২০ থেকে ২৫ টাকা। এরপর বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন বলেছিলেন, দেশের চাহিদা পূরণে ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, দাম দ্রুত কমে আসবে। কিন্তু তার মধ্যেই আজ ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা এলো।