Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অকৃতকার্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতার জন্য মন্ত্রী-এমপির সুপারিশ!

pabna-pustপাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ক্যাম্পাসে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল ইসলাম। লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় তার মৌখিক পরীক্ষা না নেয়ায় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওই কর্মকাণ্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃঞ্চনগর গ্রামে। বাবার নাম নুরুল হক। এ ঘটনায় পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে পাবনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

chardike-ad

পাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ জানান, সাড়ে তিন বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। নানা জটিলতায় এতদিন নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। এতে ২৮ জন অংশ নেন এবং ছয়জন কৃতকার্য হন। একই দিন কৃতকার্য ওই ছয়জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য মনিরুল ইসলাম বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপির সুপারিশ নিয়ে তার মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য চাপ দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় তিনি তুলকালাম কাণ্ড ঘটান।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী জানান, বিকেল ৪টার দিকে মনিরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এসে পরীক্ষার বিশেষজ্ঞ সদস্যসহ উপাচার্য, উপ-উপাচার্যকে হঠাৎ করেই গালিগালাজ করতে থাকেন। তিনি পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুরো নিয়োগ পরীক্ষাকে বিতর্কিত করার জন্য উপাচার্যকে নিয়ে মানহানিকর মন্তব্য করেন এবং বিষয়টি গোপনে মোবাইলে ধারণ করেন। পরবর্তীতে উপাচার্য সম্পর্কে মানহানিকর ও বিভ্রান্তমূলক মন্তব্য সম্বলিত অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন।

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী একটি কুচক্রিমহল বিশ্ববিদ্যালয় তথা উপাচার্যের সুনামহানির উদ্দেশ্যে এ ধরনের সংবাদ (অডিও) আপলোড করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পাবিপ্রবির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বিজন কুমার পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন (জিডি নং- ১২৪৫, তারিখ: ২৪-১০-২০১৯ ইং)।

পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ জানান, পাবিপ্রবির একটি জিডি পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য ড. এম হাবিবুল্লাহ বলেন, কঠোর গোপনীয়তা ও স্বচ্ছতা অনুসরণ করে প্রশ্নপত্র তৈরি এবং পরীক্ষা নেয়া হয়। যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সদস্য তাদের দিয়ে এবং পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। অনিয়ম বা অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কোনো সুযোগ ছিল না। কাজেই শতভাগ সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় রাজশাহী বিদ্যালয়ের একজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নির্বাচিত হন। ফলাফল রিজেন্ট বোর্ডে পাঠানো হবে।

উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওই পরীক্ষার্থী অশোভনীয় কাণ্ড ঘটায়। সে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্ত কোনো অনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। বিষয়টি পাবনা সদরের এমপি, কয়েকজন রিজেন্ট বোর্ড সদস্যসহ শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।

কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মনিরুল ইসলাম অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে সে মোবাইল ফোনের রেকর্ড অপশন অন করে প্রকাশ্যে উপাচার্যকে চার্জ করে। পরে ওই অডিও ইন্টারনেটে আপলোড করে। এটি একটি ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড।