চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এ চলমান আন্দোলন প্রশাসনের আশ্বাসে স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন স্থগিতের পর বন্ধের নোটিশ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নোটিশ পুনর্বিবেচনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) চুয়েটে জরুরিভিত্তিক সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ৯ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। যার ফলে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।
সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, দুই চুয়েট শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে শোকাহত বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এ ঘটনার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৯ মে পর্যন্ত চুয়েটের সকল একাডেমিক ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
তাছাড়া দুই শর্তে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ ধ্বংসে লিপ্ত থাকবে না।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ গেট সংলগ্ন জিয়ানগর এলাকায় বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং তৌফিক হোসেন নিহত হন। আহত হন জাকারিয়া হিমু নামে আরো একজন শিক্ষার্থী। ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। গত বুধবার ঘাতক শাহ আমানত পরিবহন বাসের চালক তাজুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করেন। সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চুয়েটের মূল ফটকের সামনে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। এরপর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় তাঁরা জানান, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালককে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি তাঁদের প্রধান দাবি ছিল। সেই দাবি পূরণ হয়েছে। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিল গঠন করবে, যেখানে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, সব শিক্ষক ও কর্মকর্তা- কর্মচারীরা সহযোগিতা করবেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই সড়কটি পর্যন্ত প্রশস্ত করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন তারা। এসব দাবি পূরণ কিংবা আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে শুক্রবার বিকেল ৪টায় সিন্ডিকেট সদস্যদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকলেও হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।