বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে পালিত হলো জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সকাল ৮টায় আমিসহ ১২ জন বিদেশফেরত অভিবাসী নারী ও পুরুষ কর্মী আসি, যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন অভিবাসী কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। আজকের উদ্দেশ্য আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে এত আয়োজন, আজকের দিনে আমাদেরই তো মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বড় বড় কর্তাবাবুরা হাজিরা দিতে এসেছেন অনুষ্ঠানস্থলে।
হাজারও মানুষের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথম নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বেষ্টনী, আমার সঙ্গে আমন্ত্রণপত্র হাতে ১২ রেমিট্যান্সযোদ্ধা, শেষ বেষ্টনীতে চারজনকে আটকে দিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। কারণ তাদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, কিন্তু আমন্ত্রণপত্রে নামের সঙ্গে লেখা বিদেশফেরত কর্মী, কোনো কিছুতেই ছাড় নেই।
অংশগ্রহণ করতে দেয়া হলো না অনুষ্ঠানে, নেয়া হলো তাদের একটি রুমে, অনুষ্ঠান শেষে মুক্ত করা হবে তাদের, মনে হয় তারা কোনো বড় অপরাধ করেছেন, আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ ছিল না যে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে, তবে কেন এমন আচরণ।
তাতেই শেষ না, আমিসহ বাকি আটজন অভিবাসীকর্মী প্রবেশ করতে গেলাম নিচের গ্যালারিতে, গেটেই থামিয়ে দেয়া হলো। আমাদের বলা হলো- নিচে ভিআইপি ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত স্থান, আপনারা উপরের সাধারণ গ্যালারিতে বসুন। বললাম আমরা অভিবাসীকর্মী, উত্তরে বলল, তাতে কী হয়েছে, কথা না বলে দ্রুত এখান থেকে চলে যান।
কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা উপরে গিয়ে আসন গ্রহণ করলাম, নিচে দেখি বিভিন্ন কর্তাবাবু, রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কোটপরা ভদ্রলোক। ভাবলাম ও আমরাতো কোটপরা ভদ্রলোক না, তাহলে ওখানে কীভাবে যাব। উপর থেকে দেখি সাংবাদিক, ভিআইপিদের জন্য বসার আসনের সামনে ট্যাগ দেয়া আছে কিন্তু কোথাও দেখলাম না যে এটা অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত স্থান।
নিজেদের বড়ই অসহায় মনে হলো। কার মর্যাদার কথা বলতে এত বড় আয়োজন, কাদের জন্য এতবড় অনুষ্ঠান? নিজের মন্ত্রণালয় তো মর্যাদা দেয় না তাহলে বিদেশে গিয়ে ভিনদেশিদের কাছ থেকে কীভাবে মর্যাদা আশাকরি।
তাই বলি দেশে আগে মর্যাদা নিশ্চিত করুন, এমন অনুষ্ঠানে অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখুন, যাতে ভিআইপি/কর্তাবাবুরা বুঝতে পারেন এরাই রেমিট্যান্সযোদ্ধা আর এদের জন্য আজ এত আয়োজন।
লেখক- আল-আমিন নয়ন, অভিবাসীকর্মী।