Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পাঁচ বছরেই মিলবে জার্মান নাগরিকত্ব, খসড়া আইন পাশ

passport-of-germanyঅভিবাসীদের জন্য জার্মানিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় দেশটির জোট সরকার। আর তাই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। এখন পার্লামেন্টে পাস হলেই কার্যকর হবে এ আইন। এতে অভিবাসীরা বৈধভাবে পাঁচ বছর বসবাস করলেই জার্মানির পাসপোর্ট অর্থাৎ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

খসড়া আইন অনুমোদনদের পর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা বলেন, আমরা একটি আধুনিক অভিবাসন আইন প্রণয়ন করছি, যা আমাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাজ ও আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য যুক্তিযুক্ত। জোট সরকারের জন্য নতুন এ আইন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার।

chardike-ad

জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে বসবাসকারী অভিবাসীদের ১৪ শতাংশেই জার্মান পাসপোর্ট নেই। এর মধ্যে ১০ বছর বা তার বেশি সময় বসবাস করছেন এমন অভিবাসীর সংখ্যা ৫৩ লাখ।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বছরের পর বছর জার্মানিতে বসবাসের পরও সমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হতে পারছেন না। এ কারণে সমাজে তারা জার্মান নাগরিকদের মতো অংশগ্রহণ ও অবদান রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।

জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও মনে করে, বর্তমান আইনে জার্মানিতে দীর্ঘদিন বসবাস করা অভিবাসীদের জন্যও নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। ২০২২ সালে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৫ জন অভিবাসী জার্মান পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। এই সংখ্যা অন্তত ১০ বছর ধরে বসবাস করেন এমন অভিবাসীর মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

তাছাড়া ইউরোপের গড় হারের তুলনায় জার্মানিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার হার বেশ কম। অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা বিদ্যমান পাসপোর্ট ত্যাগ করার বিধান এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছে জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাই নতুন আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখার বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাছাড়া একটি উৎসবের মাধ্যমে নতুন নাগরিকত্বপ্রাপ্তদের হাতে এ সংক্রান্ত সনদ তুলে দেওয়ারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

খসড়া আইনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. দ্বৈত নাগরিকত্ব

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ইইউ ও সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ছাড়া দ্বৈত পাসপোর্টের অনুমোদন দেয় না জার্মানি। কিন্তু খসড়া আইন পাস হলে বিদেশিরা নিজ দেশের নাগরিকত্ব বজায় রেখেও জার্মানির পাসপোর্ট নিতে পারবেন। অবশ্য এজন্য বেশকিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

২. খুব সময়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ

নতুন আইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সময়সীমা আট বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ, অভিবাসীরা বৈধভাবে পাঁচ বছর বসবাস করলেই জার্মানির পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর কেউ যথাযথভাবে জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন, তাহলে তিন বছর বসবাসের পরই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কাজে অসাধারণ দক্ষতা কিংবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, জার্মান ভাষার ওপর ভালো দখল এবং স্বাধীনভাবে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য আয় করার মতো বিষয়গুলো বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে।

৩. অভিবাসী শিশুরাও পাবে নাগরিকত্ব

নতুন আইন পাস হলে জার্মানিতে জন্ম নেওয়া অভিবাসী মা-বাবার শিশুরা শর্তহীনভাবে নাগরিকত্ব পাবে। চাইলে মা-বাবার দেশের নাগরিকত্বও রাখার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে মা-বাবার যেকোনো একজন বৈধভাবে জার্মানিতে পাঁচ বছর বসবাস করলেই নাগরিকত্বের যোগ্যতা অর্জন করবে শিশুরা।

৫. রাজনৈতিক অধিকার

নাগরিকত্বপ্রাপ্তরা দেশটির রাজনীতিতে মূল জনগণের মতোই অংশ নিতে পারবেন। এমনকি তারা সমঅধিকার পাচ্ছেন কি না, তার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র।

নাগরিকত্ব পাবেন না যারা:

জার্মানির নাগরিক হতে হলে তাকে দেশটির মুক্ত সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দায়বদ্ধ হতে হবে। সব মানুষের প্রতি সাম্য ও সম্মান বজায় রাখতে হবে। কেউ এ মূল্যবোধ ধারণ না করলে বা এটিকে অস্বীকার করলে তিনি নাগরিক হতে পারবেন না।

বিশেষ করে ইহুদি বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও মানবতাবিরোধী আচরণ জার্মানির মৌলিক আইনের পরিপন্থী। বৈধভাবে পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময় জার্মানিতে বসবাস করার পরও কেউ যদি এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে নাগরিকত্বের জন্য বিবেচনা করা হবে না। এছাড়া রাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা ভাতাপ্রাপ্তরাও নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না।

আবার জার্মানির আইন অনুযায়ী, বহুবিবাহ কিংবা একাধিক স্ত্রী রাখা নিষিদ্ধ ও এ নিয়ম ভাঙলে কোনো ব্যক্তি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া নারী ও পুরুষের সমানাধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখালেও নাগরিকত্ব মিলবে না।

সূত্র: ডয়চে ভেলে