Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কাতারে প্রতিদিন ধরপাকড়ের শিকার বাংলাদেশিরা

qatarবিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাক লাখ প্রবাসী, বিদেশে তাদের আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন, লাল সবুজের পতাকাকে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রবাসীরা তাদের মূল্যবান রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। এ জন্য তাদের অনেকে ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ বলেও অভিহিত করেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক প্রবাসীর অবৈধ, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। দীর্ঘদিনের নজরদারিত্বের অভাবে কাতারে বাংলাদেশিদের অপরাধপ্রবৃত্তি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

গেল বছর জুলাই মাসে কাতারের রাজধানী দোহা ন্যাশনাল এরিয়াতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই নেপালি নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করেন বাংলাদেশিরা। সেই ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ২১ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে কাতার পুলিশ। তাছাড়া বিভিন্ন অপরাধে ২৪০ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কাতার জেলে বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে ভিসা, চেক জালিয়াতি, অপহরণ, চুরি-ছিনতাইসহ অসামাজিক কাজ অন্যতম।

chardike-ad

সাম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশিদের দ্বারা সংগঠিত এ ধরনের কয়েকটি অপরাধ নিয়ে কাতার সরকার রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে। চিন্তিত কাতারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছু সংখ্যক অপরাধীর কারণে কাতারের বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও বিনা অপরাধে প্রতিনিয়ত দোহা ন্যাশনাল, সারে আসমাক, ফিরুজ আব্দুল আজিজ, মুনচুরা, রায়হান, মাইজার, নাজমাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে কাতার পুলিশ।

কাতারে বাংলাদেশি অপরাধীরা ভিসার ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, মারামারি, হাইজ্যাক, হত্যা, ধর্ষণ, পতিতা ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অবৈধপানীয়, ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে টাকা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে কাউকে জিম্মি, মারপিট, মুক্তিপণ দাবি, মাদক পাচার ছাড়াও মদ খেয়ে মাতলামি, প্রকাশ্যে জুয়া খেলা, এমনকি ছিনতাইয়ে জড়িত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরাধীদের বেশিরভাগ অবৈধ হবার কারণে কোনো ঘটনার পর তাদের খুঁজে বের করা দুষ্কর। মাঝে মাঝে মধ্যম পর্যায়ের দু-একজন আটক হলেও অপরাধীদের সিন্ডিকেট তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং গডফাদারেরা বরাবরই থেকে যায় অধরা।

মূলত যারা উচ্চ মূল্যে ফ্রি ভিসা কিনে কাতারে আসে, তাদের অধিকাংশই এখানে এসে মালিক খুঁজে পায় না অথবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নবায়ন না করে অবৈধ হয়ে পড়েন। অন্য দেশের শ্রমিকেরা কাতারে বিনাখরচে ভিসা পেলেও বাংলাদেশিরা উচ্চ মূল্যে ভিসা কিনে আসেন।

এদিকে অবৈধ শ্রমিকদের কাজে পাওয়া গেলে নিয়োগকর্তাকেই মোটা অংকের জরিমানার বিধানের কারণে কাতারে অবৈধদের এখন আর কেউ কাজে নিতে চায় না। তাই কর্মস সংকটে পড়ে অনেকে এ পথে জড়িয়ে পড়ছেন।

অপরদিকে বাংলাদেশিদের দ্বারা কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে ভারতীয় সাংবাদিক নিয়ন্ত্রিত স্থানীয় মিডিয়াগুলো তা ফলাও করে প্রচার করে। বাংলাদেশিদের দ্বারা সংঘটিত তুচ্ছ অপরাধও সেখানকার প্রভাবশালী দৈনিকগুলোর হেডলাইন হচ্ছে অহরহ। এ কারনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশ-কাতার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে।

কমিউনিটির নেতা রাসেদুল হাসান সুমন বলছিলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। জনশক্তি রফতানিতে কাতার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কিছুসংখ্যক অপরাধীর জন্য শ্রমবাজার নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে অপরাধ দমনে।

কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশিরা সামান্য বিষয় নিয়ে একে অপরের সঙ্গে মারামারি এমনকি হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করতেও দ্বিধা করেন না। মাদকের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’

‘শুধু তাই নয় বিদেশ আসার আগে ফ্রি নামক ভিসায় কাজের কোনো চুক্তিপত্র না থাকায় অল্প সময়ে বেশি টাকা ইনকাম করার প্রবণতার কারণে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বাংলাদেশিরা, যা কাতারের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে বিনষ্ট করছে। বাংলাদেশ কমিউনিটি দীর্ঘদিনে কাতারে যে সুনাম-মর্যাদা অর্জন করেছিল, বর্তমান সময়ে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর কারণে তা শেষের পথে’,- যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘কাতারে বর্তমানে ধরপাকড়ের ব্যাপারে কাতার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ দূতাবাস।’ তাই বৈধ কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে চলাচলের পাশাপাশি যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য দূতাবাসে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।