Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

korea-armyকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উত্তর কোরিয়ায় অন্তত ১৮০ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৭০০ জনকে। দক্ষিণ কোরিয়ার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি এনকের বরাত দিয়ে হংকংভিত্তিক পত্রিকা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে মঙ্গলকবার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, করোনার বৈশ্বিক মহামারি থেকে এখনও দূরে রয়েছে তার দেশ।

উত্তর কোরিয়ায় বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে পরে তা সংবাদ আকারে প্রকাশ ডেইলি এনকে। সংবাদমাধ্যমটির তথ্যমতে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত উত্তর কোরিয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেই মারা গেছে ১৮০ সৈনিক। এছাড়া ৩ হাজার ৭০০ সৈন্যকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার-সমর্থিত সংবাদ সংস্থাটি আরও জানায়, উত্তর কোরিয়ায় করোনা আতঙ্কে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার সৈনিককে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। করোনার উপসর্গ ধরা না পড়ায় প্রায় চার হাজার সৈনিককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তবে দেশে করোনার উপস্থিতি বরাবরই গোপন করে আসছে উত্তর কোরিয়া। ফলে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ঠিক কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

উত্তর কোরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা রোডং সিনমুনের বরাত দিয়ে সোমবার মার্কিন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইক জানায়, দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা ছড়িয়ে পড়েনি।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২২ জন আক্রান্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ২৭ জন। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬৪ হাজার ৮১ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।

বিশ্বের ১১৫টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপরই এই ভাইরাস চীনের অন্যান্য শহরসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।

উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দেয়া এক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করছে ডেইলি এনকে। ডেইলি এনকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর দেশটির সামরিক বাহিনীর মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সূত্র বলেছে, মিলিটারি হাসপাতালের যেসব জায়গায় করোনা সন্দেহে সৈন্যদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে, সেসব জায়গা জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুস্থ বা যেসব সৈনিকের স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে-উভয়কেই বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এদিকে করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে সংশ্লিষ্টদের কঠিনতম ফল ভোগ করতে হবে।

এনকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শত শত সৈনিককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা এবং শতাধিক সৈন্য মারা যাওয়ার ঘটনায় চরম আতঙ্কে রয়েছে দেশটির সেনা সদস্যরা। সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত কতজন সৈনিক মারা গেছে-এর ওপর ভিত্তি করে করোনার বিষয়ে ভবিষ্যত মূল্যায়ন করা হবে।

সূত্র বলেছ, কোনো ইউনিটে কোনো সৈনিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে ওই ইউনিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে দায় নিতে হবে। তাই আতঙ্কে রয়েছেন তারা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সৈন্যদের খাবারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। ডেইলির এনকের সূত্র বলছে, সৈন্যদের যেন প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০০ গ্রাম খাবার খাওয়ানো হয়, সেই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্তত সৈন্যদের যেন প্রতিদিন তিন বেলা (আগে এক বেলা দেয়া হতো) সয়াবিনের স্যুপ দেয়া হয়, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে চীনে। সেখানে ৮০ হাজার ৭৫৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩ হাজার ১৩৬ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সীমান্তের কারণে করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। তবে বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবিলায় যেসব চিকিৎসা সামগ্রী থাকা দরকার, সরবরাহের অভাবে দেশটিতে এর যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তারপরও দেশটি বলছে, সেখানে এখনও কোনো করোনার রোগী ধরা পড়েনি।

৩৮০ জন বিদেশি, যাদের অধিকাংশই কূটনীতিক, করোনা আতঙ্কে তাদের এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে উত্তর কোরিয়া।

চীন সীমান্তের এই দেশটি করোনার বিস্তার ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শরীরে করোনার উপস্থিতি না পাওয়া গেলেও চীনাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অথবা সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করেছেন-এমন যেকোনও ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কিম জং উন।

শীর্ষ নেতার এমন নির্দেশ যারা অমান্য করবেন; বিশেষ করে অনুমোদন ছাড়া কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হলে যে কাউকে সামরিক আইনে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে ডিক্রি জারি করে এমন নির্দেশনা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।