Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

টোকিওতে আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

tokyo-japanমেট্রোপলিটন এবং তিন জেলা—কানাগাওয়া, সাইতাম ও চিবা নিয়ে বৃহত্তর টোকিও। সেখানে ১৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। তাঁদের অধিকাংশ কর্মজীবী হলেও ছাত্র ও ব্যবসায় জড়িত লোকজনের সংখ্যাও কম নয়। জাপানের রাজধানীতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এঁদের অনেকেই আতঙ্কে আছেন। সব রকম সতর্কতা মেনে তাঁরা যতটা সম্ভব বাইরে বের হচ্ছেন না। টোকিওতে এখনো করোনাভাইরাসে কোনো বাংলাদেশির নিশ্চিত সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে জানা গেছে।

টোকিওতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা শুধু অসুস্থ হওয়ার আতঙ্কে নেই। বরং এই পরিস্থিতির কারণে জাপানের অর্থনীতি আরও কিছুদিন থমকে থাকলে তাঁদের অনেকের উপার্জনের পথ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যেও ব্যবসার ধরন নিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।

chardike-ad

বাদল চাকলাদার জাপানে অনেক দিনের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। হালাল ফুডের ব্যবসা দিয়ে তাঁর শুরু। এরপর কাটারিং সার্ভিস হয়ে নিজের একটি সুপার মার্কেট কিছুদিন আগে শুরু করেছেন সাইতামা জেলায়। তাঁর ভাষ্য, এই পরিস্থিতিতেও তাঁর সুপার মার্কেটের ব্যবসা মন্দ যাচ্ছে না।

অন্যদিকে যাঁরা রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন, তাঁদের দিনকাল তেমন ভালো যাচ্ছে না। সোহেল রানা এই সাইতামা জেলায় একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেছেন মাত্র কিছুদিন আগে। তিনি ধারণাও করতে পারেননি সবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রেস্টুরেন্টটি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়বে। সোহেল বলেন, তাঁর বিক্রি এখন চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। এই অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হতে পারে। জাপান সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাকে সাহায্য করার যে পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে, তিনি এখন সেই সহায়তা লাভের উপায় খুঁজছেন।

বৃহত্তর টোকিওতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও পানশালায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ছাত্র হিসেবে আসা তরুণদের অনেকে সে রকম জায়গায় কাজ করে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন। অন্যদিকে অনেক দিন ধরে যাঁরা জাপানে আছেন, তাঁদের কারও কারও সংসার নির্ভর করছে এই আয়ে। এদের অনেকের মধ্যে এখন দুই ধরনের আতঙ্ক বিরাজমান। প্রথমত, সীমিত আকারে যেসব রেস্টুরেন্ট চালু আছে, সেখানে ক্রেতাদের সেবা দেওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব সেভাবে বজায় রাখা সম্ভব নয়। ফলে যেকোনো সময় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে চাকরি হারানোর ভয় আছে।

অফিস কিংবা কারখানায় কর্মরত লোকজনের অবস্থা অবশ্য তেমন খারাপ নয়। অফিসকর্মীদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে বসে কাজ করা শুরু করেছেন। আর কারখানার কর্মীরা এখনো নিয়মিত কাজে যাচ্ছেন। মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন কাজ করেন কম্পিউটার-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কোম্পানিতে। তিনি বলেন, তাঁর কোম্পানিতে কাজের ঘাটতি তেমন নেই, তবে অন্য একটা কারণে সেখানে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। কারণ জাপানের অন্যান্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মতো তাঁর কোম্পানিও যন্ত্রাংশের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে যন্ত্রাংশের চালান আসা বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব কোম্পানির উৎপাদনপ্রক্রিয়াও থমকে যাওয়ার মুখে।

তবে এ পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যতটা সম্ভব একে অন্যকে সাহায্য করছেন। সবাই নিয়মিতভাবে কাছের বন্ধুবান্ধবের খবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যও করছেন। তাঁদের এই সহযোগিতা শুধু বাংলাদেশিদের জন্যই সীমিত থাকেনি। খোকন কুমার নন্দী টোকিওর কেন্দ্রস্থলে একটি রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে মাস্ক এনে জাপানিদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন, কিছুদিন আগে জাপানের একটি টেলিভিশন চ্যানেল তাঁকে নিয়ে সংবাদও প্রচার করে।

সৌজন্যে- প্রথম আলো