Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

korea-coronaমধ্য-ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবার স্থানীয়ভাবে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণ শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন চার জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। তবে এদের প্রত্যেকেই বিদেশ ফেরত। দেশে প্রবেশমাত্রই তাদের পরীক্ষা করে আইসোলেশনে রাখা হয়। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫ জনে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য নতুন এক মাইলস্টোন। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাসটির অন্যতম এক হটস্পট হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল দেশটি। কিন্তু কঠোর, দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে তারা। দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন বলেন, এটা দক্ষিণ কোরিয়া ও এর জনগণের শক্তি।

chardike-ad

যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করলো দ. কোরিয়া: ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এই সংক্রমণের পেছনে দায়ী ছিল দায়েগু শহরের একটি ধর্মীয় দল। যিশু খ্রিস্টের এক গীর্জার এক সদস্যের মধ্যে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। খুব শিগগিরই গীর্জার আরো কয়েক ডজন সদস্যও আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। দলটির মাধ্যমে কয়েক হাজার মানুষ আক্রান্ত হন। সংক্রমণের হার বৃদ্ধির পরপরই দক্ষিণ কোরীয় দেশজুড়ে ব্যাপক হারে করোনা পরীক্ষা শুরু করে। দেশজুড়ে স্থাপন করা হয় ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক। বিনামূল্যে ভাইরাসটির পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষার হার বৃদ্ধি মানে অধিক সংক্রমণ ধরা পড়া। কিন্তু এতে একইসঙ্গে কার্যকরভাবে আক্রান্তদের খুঁজে বের করাও সম্ভব হয়ে উঠে। তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইসোলেশনে রাখা হয়, চিকিৎসা দেয়া হয়।

আক্রান্তদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করে দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষ। তাদেরও পরীক্ষা করে আইসোলেশনে রাখা হয়। কোনো আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর তাতক্ষণিকভাবে তার কর্মস্থল ও বাড়ির আশপাশের ব্যক্তিদের কাছে একটি সতর্কবার্তা পাঠানোর ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।

দায়েগুর ওই গীর্জা সংশ্লিষ্ট আক্রান্ত এক সময় পুরো দেশের মোট আক্রান্তের অর্ধেক হয়ে উঠেছিল। এর পরপরই দক্ষিণ কোরিয়া সরকার দেশজুড়ে সকল গীর্জা ও গণজমায়েত বন্ধ করে দেয়। এরপর আজ বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়েছে সকল গীর্জা। তবে প্রার্থনাকারীদের গীর্জার ভেতর দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে, পাল্টে গেছে চিরচেনা দুপুরের খাবার খাওয়ার পরিবেশও। এখন আর দুপুরে ক্যাফেটেরিয়ায় একসঙ্গে জড়ো হয়ে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। দেশজুড়ে ক্যাফেটেরিয়াগুলোয় স্থাপন করা হয়েছে সুরক্ষা স্ক্রিন। তবে দেশের সকল রেস্তোরা এই কঠোর নিয়ম মানছে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ কোরীয় এখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। তবে অনেকের জন্য স্বাভাবিক গতিতে ফিরে যাচ্ছে জীবন। রাস্তায় বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। তবে কোনো অনুষ্ঠান বা ভবনে প্রবেশের আগে প্রত্যেককে তাপমাত্রা মাপতে হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার করোনা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল মাসের শুরুর দিকে আয়োজিত জাতীয় নির্বাচন। হাজার হাজার মানুষ ১৫ই এপ্রিল লাইন ধরে ভোট দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের গ্লভস ও মাস্ক দেয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রে ঢোকার আগে প্রত্যেকের তাপমাত্রা মাপা হয়েছিল। তাপমাত্রা বেশি এমন ভোটারদের জন্য বিশেষ বুথ স্থাপন করা হয়েছিল। অনেকে আশঙ্কা করেছিল জাতীয় নির্বাচনের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়বে। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

করোনার মধ্যেও দেশের গণপরিবহন চালু রাখতে ব্যাপক সফল হয়েছে দক্ষিণ কোরীয় সরকার। সাবওয়ে স্টেশনগুলো নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। দেশটির অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া বেসবলও বন্ধ হয়নি। দর্শকহীন মাঠে খেলোয়াড়রা তাদের খেলা চালিয়ে গেছেন। এদিকে, এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল-কলেজ। খালি পড়ে আছে ক্লাসরুমগুলো। তবে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।

দক্ষিণ কোরিয়ার কঠোর পদক্ষেপ জীবনের অনেক ক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তবে এসব পদক্ষেপের কারণে দেশটি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণেও আনতে পেরেছে।