Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিদেশে হার না মানা এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর গল্প

nirobভূ-মধ্যসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস। আয়তন প্রায় ৩ হাজার ৫৭২ বর্গ মাইল। জনসংখ্যা ১২ লাখের কাছাকাছি। নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত দেশটি। ভালোবাসার দেবী হিসেবে খ্যাত অ্যাফ্রোদিতির জন্মস্থান পূর্ব ভূ-মধ্যসাগরীয় এ দ্বীপরাষ্ট্রে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য অনেক দেশের মতো সাইপ্রাসেও প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে। একটা সময় উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ করে ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল ছিল দেশটি।

একে নিরব খান। প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৫ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাসে পাড়ি জমান। সম্প্রতি তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনি একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তিনি দেশটিতে বসবাসরত দেশিদের মাঝে ইতোমধ্যে নয়নের মণি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তবে তার এ সাফল্যের অগ্রযাত্রার পথটি মোটেও মসৃণ ছিল না। পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশিরা সাইপ্রাসে আসলেও ইউরোপের অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমানোর রুট হিসেবে ব্যবহার করে দেশটি। হাতেগোনা কয়েকজন লেখাপড়া চালিয়ে যায়।

সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে আজকের এ অবস্থানে পৌঁছাতে পারায় তিনি গর্ববোধ করছেন। সাইপ্রাসে সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে বিশেষত নর্থ সাইপ্রাস থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে পাড়ি জমানো বাংলাদেশিদের কারণে সামগ্রিকভাবে সেখানে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি অনেকটা মিয়ম্রাণ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বর্তমানে সাইপ্রাসে স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অনেকে আসলেও শেষ পর্যন্ত কেউই সেভাবে আর লেখাপড়া করছেন না। অনেকে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপের অন্য দেশে পৌঁছানোর একটি রুট হিসেবে সাইপ্রাসকে বেছে নিচ্ছে।

একে নিরব খান বলেন, সাইপ্রাসে আসার আগে আমি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি পড়তাম। তবে কোর্সটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারিনি।আমার জীবনের একটি স্বপ্ন ছিল যুক্তরাজ্য থেকে উচ্চশিক্ষা নেয়ার। অনেকের মতো আমিও কোনও এক অ্যাজেন্সির ফাঁদে পা দিয়েছিলাম। এ কারণে এলএলবি কোর্স অসমাপ্ত রেখে সাইপ্রাসে পাড়ি দিই।

রাজধানী নিকোশিয়া বা লেফকোশিয়ার উপকণ্ঠে স্ট্রোভলস নামক এলাকায় লিদ্রা কলেজে তিনি আইনশাস্ত্রের ওপর ব্যাচেলর শেষ করার জন্য আসেন। তার ইচ্ছা ছিল লিদ্রা কলেজ থেকে পরবর্তীতে গ্রেট ব্রিটেনের কোনও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পাড়ি জমানো। একই বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য এবং অ্যাজেন্সিও তাকে এমন আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সাইপ্রাসে পৌঁছানোর পর তিনি দেখেন বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে আমাদের মতো অনেক উঠতি বয়সের যুবকের স্বপ্ন থাকে উন্নত বিশ্বের কোনও দেশে পা রাখা কিন্তু বিভিন্ন কারণে দেখা যায় সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকে বিভিন্নভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন। তিনিও ব্যতিক্রমী নন সেক্ষেত্রে।

শুরুতে সাইপ্রাসে পা রাখার পর তার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তবে অদম্য মনোবলের কারণে তিনি সকল প্রতিকূলতাকে জয় করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। ব্যাচেলর অব ‘ল’ এর পরিবর্তে তিনি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ব্যাচেলর অব সায়েন্স করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথমদিকে সকল প্রতিকূলতাকে সামাল দিতে পারাটা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা। নিজের ইচ্ছাশক্তির ওপর অবিচল থাকা। তার লক্ষ্য ছিলও যে কোনও মূল্যে তিনি ব্যাচেলর শেষ করবেন এবং তিনি তার এ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি কখনও। যেহেতু তিনি নিজের ইচ্ছাতে সাইপ্রাসে পা রেখেছিলেন এবং তার কাছে দেশে ফিরে যাওয়ারও কোনও সুযোগ ছিল না।

সে সময় পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় তাই যতটা সম্ভব শ্রম ব্যয় করেছেন তিনি তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য। বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোতে ল্যাব ক্লাস ও থিসিসের অনেক সময় বাড়তি চাপ থাকে, তাই তিনি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কষ্ট হলেও চেষ্টা করেছেন পার্টটাইম চাকরি করে নিজের টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে। বিশেষত সাইপ্রাস যেহেতু ট্যুরিস্ট নির্ভর অর্থনীতির দেশ এবং সামারে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে ও এ সময় ভার্সিটিও বন্ধ থাকে তাই এ সময়টাকে তিনি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন টিউশন ফিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ তোলার জন্য।

এমনকি কয়েক মাস আগে ট্যুরিস্ট ভিসায় তিনি ইংল্যান্ডও ঘুরে এসেছেন। অর্থাৎ তার স্বপ্ন ছিলও ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করা তিনি সেটা পূরণ করতে সমর্থ হয়েছেন এবং ইংল্যান্ডে যাতায়াত থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় খরচ তিনি এ পার্টটাইম চাকরির মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন।

সম্প্রতি তিনি দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশের সংগঠন ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি অব সাইপ্রাসে’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত সাইপ্রাসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে সমাজসেবামূলক বিভিন্ন অবদান রাখায় তিনি এ সম্মাননা অর্জন করেছেন। ভবিষ্যতেও এভাবে দেশটিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান।

লেখক- রাকিব হাসান রাফি

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email