Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

korea-bangladeshচলমান করোনা মহামারী মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৪২৫ কোটি টাকা (৫ কোটি মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। ‘দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)’ থেকে এ ঋণ দেয়া হবে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এক চিঠির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

করোনা মোকাবেলায় সরকার গত জুনে এই ঋণ সহায়তা চেয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয়। দুই দেশের আলোচনার ভিত্তিতে ঋণ দেয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।

chardike-ad

এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে ১৭ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার (২০৩ কোটি মার্কিন ডলার) ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত জং কিউ লি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এ অর্থ দিয়ে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে পারবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এতে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ সফলভাবে মোকাবেলা করায় ওই চিঠিতে সাধুবাদ জানানো হয়।

সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের ঘোষিত ২১টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা কর্মসূচির অর্থায়ন নিয়ে সরকার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

প্রণোদনা প্যাকেজ অগ্রগতি সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে অর্থায়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের কথাটি পরিষ্কার বলা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত এক বৈঠকে বলেছেন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং জাইকা বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রথম সাপোর্ট দিয়েছে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, বিশ্ব অর্থনীতি নিুমুখী পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আসছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার নতুন নতুন দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে অর্থায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঋণ সহায়তার কার্যক্রম নিয়ে আগস্টে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী একটি ভার্চুয়াল কনফারেন্স করেছেন। সেখানে অর্থনীতির মাঠে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রী হং নেম কি-এর কাছে ঋণ সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়।

ওই চিঠিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ইডিসিএফ থেকে ৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তার অনুরোধ জানানো হয় দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থমন্ত্রীকে। পাল্টা জবাবে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকারের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ইডিসিএফ থেকে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এখন ঋণের চুক্তিপত্র পাওয়ার পর পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সূত্র আরও জানায়, দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ঋণ সহায়তার সম্মতি পাওয়ার পর অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এর আগে প্রথম ঢেউয়ে ৬৬ দিন লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা ও গণপরিবহন বন্ধ থাকে।

এতে সার্বিক অর্থনীতির কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। তবে এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি চলতি বাজেট থেকে বড় ধরনের একটি সহায়তা দেয়ার কারণে সরকার নিজেই ব্যাংক ঋণগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণ সহায়তা সংগ্রহের জন্য পুরনো দাতা সংস্থার পাশাপাশি নতুন নতুন দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। ফলে এ সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ান সরকারের এই ঋণ সহায়তা সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। এই সহায়তা বাজেট সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সরকার ২১টি প্যাকেজের ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার ৬০৩ কোটি টাকার সরাসরি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট থেকে।

এই অর্থ দিয়ে ১৪টি প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এছাড়া প্যাকেজের বাকি ৮৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে ব্যাংকিং খাত থেকে। সাতটি প্যাকেজের মাধ্যমে এ অর্থ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে এসব প্রণোদনা ঋণের প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারকে ঋণের সুদ ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে। এই সুদ খাতে ভর্তুকিও পরিশোধ করা হবে বাজেট থেকে।

সূত্রমতে, করোনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৩২ কোটি মার্কিন ডলার, আগামী অর্থবছরে ১ হাজার ৬৩ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ৯৫৫ কোটি ডলার, ১ হাজার ৫ কোটি ডলার এবং ১ হাজার ৬ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ