Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার করপোরেট সংস্কৃতি

প্রতীকী ছবিকরপোরেট প্রতিষ্ঠানে একবার ঢোকার পর সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে চলা, এটি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ জীবনের একটি স্বাভাবিক চিত্র। দেশটির অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানে টপ লেভেলে এখন অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য। সাধারণত যে কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদগুলোতে পক্বকেশ প্রবীণ এবং বিশেষ করে পুরুষদের বেশি দেখা যায়। কিন্তু মিলেনিয়াল প্রজন্ম নামে পরিচিত তরুণরা এখন যে চিরাচরিত ধারণাই পালটে দিচ্ছে তাই নয় বরং করপোরেট সংস্কৃতির প্রথাগত ধারণাও বদলে দিচ্ছে।

পারিবারিক মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ভিত গড়েছে। এসব শিল্পগোষ্ঠী স্থানীয় ভাষায় চেয়োবল নামে পরিচিত। যে কোনো সরকারি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাতেও প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত নাম, যেমন স্যামসুং, হুন্দাই, কিয়া, এলজি, লটে প্রভৃতি। কোনো একটি চেয়োবলের শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করতে পারা দেশটির অনেক মানুষের কাছে ছিল এক স্বপ্ন। কোরিয়া যুদ্ধের পর দেশটিতে বেসরকারিকরণে যে হিড়িক পড়ে সেটাও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পদগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এজন্য উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট পেতে তরুণ সমাজের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ে। কোনো একটি চেয়োবলের শীর্ষ পর্যায়ে যেতে দেশটির সেরা তিন ইউনিভার্সিটির অন্তত একটির সার্টিফিকেট থাকা যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।

chardike-ad

শিল্পায়ন দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে। সে সঙ্গে বাড়িয়েছে উচ্চশিক্ষিত কর্মহীন লোকের সংখ্যা। গত এক দশকে চেয়োবলের মধ্যম স্তরে বহু চার বছরের কলেজ গ্রাজুয়েটধারীর প্রবেশ ঘটেছে। এই পদগুলো যথেষ্ট সম্মানজনক নয় তবে চাকরির নিশ্চয়তা আছে। এরাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ পদগুলোতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন চেয়োবল পরিবারের ১৩০ জন তরুণ শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত আছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব নির্বাহীদের সরিয়ে তারা ঐ পদে আসীন হয়েছে। এদের মধ্যে তিন জন আছেন চেয়ারম্যান পদে। এখন থেকে আট-দশ বছর আগেও দেশটির যেকোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের লবিতে যেখানে স্যুটটাই পরা কেতাদুরস্ত নির্বাহীদের দেখা মিলত এখন সেখানে কোটটাই ছাড়া সাধারণ অফিসিয়াল পোশাকে তরুণ নির্বাহী দেখা যায়। এটি একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন, গত পাঁচ-সাত বছরে যা স্পষ্ট হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার করপোরেট কালচারে যে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে তার এক উদাহরণ হুন্দাই মোটর হ্রুপের চেয়ারম্যান এখন ৫০ বছর বয়সি চুং ইউই সান। তিনি এর আগে কোম্পানিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চুং হুন্দাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা চুং জু ইয়ংয়ের নাতি। তার বাবা চুং মং কু কোম্পানির দ্বিতীয় চেয়ারম্যান ছিলেন। ইংরেজিতে পারদর্শী চুং যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেছেন। স্বাভাবিকভাবে তার ঐ পদে আসতে যতটা সময় লাগার কথা ছিল তার অনেক আগেই তিনি সেখানে পৌঁছেছেন। তিনি হুন্দাই ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান কিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন। যেমন হুন্দাইয়ের গাড়ি প্রচলিত ডিজাইনে পরিবর্তন। এই লক্ষ্যে তিনি জার্মানি থেকে একজন ডিজাইনার ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। নির্বাহীদের জন্য নির্ধারিত গাড়ি ব্যবহার না করে তিনি ব্যবহার করছেন অন্য গাড়ি। নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার নিয়ম তিনি উঠিয়ে দিয়েছেন। স্টাফরা তাদের সুবিধামতো আট ঘণ্টা সময় কাজ করবে। ছুটি কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে যেখানে কাগজে ঊর্ধ্বতনের সই নেওয়ার নিয়ম ছিল এখন সেখানে তা অনলাইনে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও পরিবর্তনগুলো বিশাল কিছু নয় কিন্তু তিনি যে পরিবর্তনকে যে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন এ থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়।

বাবা চেয়ারম্যান থাকাকালে তার অধীনে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। চুংকে ঘিরে কাজ করেন একদল তরুণ নির্বাহী যারা সময় সময় তার সঙ্গে সেলফি তোলেন। গত মাসে তিনি হুন্দাইয়ের তৃতীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হুন্দাই দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম চেয়োবল এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মোটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো এখন পশ্চিমা স্টাইল বেছে নিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য এখন নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্বের পর্যায়ের নিয়ে আসতে। কারণ তারা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নতুন ধ্যান ধারণা নিয়ে কাজ করতে পারবে।

লেখক- এম এ আল আমিন, সৌজন্যে- দৈনিক ইত্তেফাক