Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মিশন স্বপ্নজয়!

du food pointস্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা। প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার যুদ্ধে যেন শান দেওয়া তরবারির মতোই প্রয়োজনীয় এই তিনটি শব্দ। সফলতার স্বপ্ন দেখার সাহস অনেকের থাকলেও সেই সফলতাকে ছুঁয়ে দেখার স্পৃহা থাকে কেবল গুটিকয়েক মানুষের। বৃত্তের ঠিক একটুখানি বাইরে অবস্থানকারী সেইসব মানুষের মধ্যে একজন হলেন ওয়াহিদুল ইসলাম ওয়াহিদ।

ওয়াহিদ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সেশনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে ওই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করলেও বিষয়টি নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না তার। তাই শুরুতে বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। অবশেষে ভাবলেন নিজেই কোনো ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু তার এমন ভাবনায় সমর্থন জানালেন না পরিচিত কেউ, এমনকি পাশে পেলেন না নিজের পরিবারকেও। তবু নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে  ব্যবসা হিসেবে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করলেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় ‘ডিইউ ফুড পয়েন্ট’ এবং উদ্দ্যোক্তা ওয়াহিদের যাত্রা।

chardike-ad

মূলত ২০২৩ সালের ২৪শে মার্চ তথা প্রথম রমজান থেকেই তিনজন বন্ধুকে নিয়ে ইফতার সরবরাহের কাজ শুরু করলেও তারা পিছিয়ে যান প্রথমদিনেই। কিন্তু ওয়াহিদ হার না মেনে নতুন উদ্দ্যমে কাজ শুরু করেন। তিনজন বন্ধুর মাঝে একজন পুনরায় এসে যোগ দেন তার সাথে। এবার বন্ধুর সহযোগিতায় তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেন খাবার সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে এবং সাত দিনের মধ্যেই আশার আলো দেখতে পান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।নিজ পরিশ্রমে দাঁড় করান পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক খাবার সরবরাহকারী প্ল্যাটফর্ম যা ‘ডিইউ ফুড পয়েন্ট’ নামে পরিচিত।

শুরুতে ২জন কর্মচারী নিয়ে কাজ শুরু করেন তারা। নিজেরাই ফজলে রাব্বি হলের ক্যান্টিনে ইফতার বানানোর কাজ করতেন, পরে সেগুলো সরবরাহ করা হতো চাহিদা অনুযায়ী। বর্তমানে ওয়াহিদ একাই ব্যবসা সামলান। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আরও ১২ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন যারা রাইডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

খাবার সংগ্রহের বিষয়ে ওয়াহিদ জানান, “গত বছর রমজানে আমরা নিজেরা ইফতার বানিয়ে সরবরাহ করলেও বর্তমানে নাজিমুদ্দিন রোডের একটি রেঁস্তোরা থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি সহ ১০-১২ প্রকারের খাবার নিয়ে এসে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। এসব খাবারের পাশাপাশি আমরা চিয়াসীড, মধু, কুমিল্লা থেকে বিখ্যাত রসমালাই নিয়ে এসে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেই।”

চলার পথে বাধা-বিপত্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, “শুরুতে পরিবারের সবার সম্মতি না থাকলেও এখন আমার এই সফলতায় সকলে খুব খুশি। আমার বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাইসহ সকলে এই পথচলায় আমার পাশে ছিল। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এত কিছু সম্ভব হতো না। আমার শিক্ষকরাও আমাকে যথেষ্ট সাহস এবং শক্তি দিয়েছেন।”এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। ক্রেতা হিসেবেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ সহ ‍আশে-পাশের এলাকায়ও ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তার মতে, “ছাত্র-ছাত্রীরাই আমার ফুড পয়েন্টকে আগলে রেখেছে।”

তরুণদের উদ্দেশ্যে ওয়াহিদ বলেন, “আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা থাকলেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বহুদূরে এগিয়ে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে হার মেনে নিলে হবে না। হার মেনে নেওয়া মানেই পরাজয় বরণ করা। আমাদের বর্তমান সমাজে চাকরি আসলেই সোনার হরিণ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই চাকরি নামের এই সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে সাধারণ গণ্ডির থেকে বের হয়ে মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারলেই নিজ উদ্দ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়া ‍সম্ভব।”