Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান

শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে মুসল্লিদের ঢল। সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার

ঈদ-উল-ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহার মূল অনুষঙ্গ ঈদ জামাত। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করবেন।

ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেটি ঈদগাহ ময়দানের ইতিহাসে ১৯৭তম ঈদ জামাত। যেখানে বিভিন্ন জেলা এমনকি বিদেশ থেকেও কয়েক লক্ষ মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন।

chardike-ad

ঐতিহাসিক এই ঈদ জামাত শুরু হবে সকাল দশটায়। এর আগে তিনবার শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এই জামাতের ইমামতি করবেন কিশোরগঞ্জ আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ। নারীদের জন্য সূর্যবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই মধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সর্ববৃহৎ জামাতের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছর দুই ঈদে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের মুসল্লিরা এখানে নামাজে অংশ নিতে আসেন। তাই বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

ঈদগাহ পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত একর আয়তনের ঈদগাহের মূল মাঠে নামাজে প্রায় ২৫০টি কাতার থাকবে। প্রতিটি কাতারে ৬০০-৭০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন। মূল মাঠের চারপাশে আরও অনেক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থাকবেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। মাঠের ভেতর-বাইরে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাসহ ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো মাঠের মুসল্লিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কমিটির সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন কিশোরগঞ্জে আসবে। মুসল্লিদের অজু ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, মেডিক্যাল টিম, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।’

নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের জামাতে কেবল জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, ‘ছাতা, ব্যাগ, লাঠি কিংবা লাইটারজাতীয় কিছু নিয়ে মাঠে না আসাই ভালো। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জামাত আয়োজনে সবার সহযোগিতা চাই আমরা।’

২০১৬ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত ও কঠোর করা হয়েছে বলে জানালেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। তিনি বলেন, ‘এবার পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে বিজিবি। থাকবে ড্রোন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও পুলিশের চেকপোস্ট।’

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ জানিয়েছে, নামাজের সময় প্রায় ১৪০০ পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র‌্যাব সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার সদস্যরা মাঠ ও মাঠের বাইরে মোতায়েন থাকবেন। সেই সাথে সাদা পোশাকে মাঠে নজরদারি করবেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। থাকবে ফায়ার সার্ভিস, তিনটি অ্যাম্বুলেন্স, মেডিক্যাল টিম ও পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম‌ (কিউআরটি)। ঢাকা থেকে আসবে পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। পুরো মাঠ বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদ জামাত উপলক্ষে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করবে। এর একটি ভৈরব থেকে, আরেকটি ময়মনসিংহ থেকে শোলাকিয়ার উদ্দেশে ছাড়বে। ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ (স্পেশাল) নামের ট্রেনটি ভৈরব স্টেশন থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসবে। ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (স্পেশাল) নামের অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় এসব ট্রেন কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে ফিরে যাবে। বাসে করে  ঈদগাহে পৌঁছে দিতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিশেষ সার্ভিস চালু করছে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থা।

উল্লেখ্য, শোলাকিয়ার ঈদগাহের যাত্রা শুরু হয় ১৭৫০ সালে। শোলাকিয়ার আগের নাম ছিল রাজাবাড়ীয়া। জনশ্রুতি অনুযায়ী, একসময় শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সোয়া লাখ মুসল্লি হওয়ার কথাটি এখনো কিশোরগঞ্জের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সেই থেকে ঈদগাহটি একসময় শোয়ালাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নামকরণের এমন ধারণার সঙ্গে অনেক ইতিহাসবিদের দ্বিমত আছে। অন্য মতটি হলো, মুঘল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। কালের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া, বর্তমানে শোলাকিয়া যার নাম হয়েছে।