Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

indexবঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্লক দুটি ছেড়ে দিচ্ছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি কনোকোফিলিপস। গতকাল এ বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে কোম্পানিটি। গভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালিয়ে একটিতে গ্যাসস্তর খুঁজে পেয়েছে তারা। এতে চার ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে তা উত্তোলনযোগ্য মনে করছে না কনোকো। তবে গ্যাসের দাম না বাড়ানোয় তারা ব্লক দুটি ছেড়ে দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, নতুন উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি)-২০১২ অনুযায়ী প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম সাড়ে ৬ ডলার। আর কনোকোর সঙ্গে সম্পাদিত পিএসসি-২০০৮ অনুযায়ী গ্যাসের দাম ৪ দশমিক ২ ডলার। তাই গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় কনোকো। এরই মধ্যে তারা সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় কোম্পানিটি।

chardike-ad

জ্বালানি বিভাগ জানায়, দ্বিমাত্রিক জরিপে প্রাপ্ত গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা মাত্র ২০ শতাংশ। এ সম্ভাবনাকে পুঁজি করেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি তুলেছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিটি। তাদের প্রস্তাব মেনে নিলে অন্যরাও একই দাবি তুলবে। এতে সামগ্রিকভাবে বেড়ে যাবে গ্যাসের দাম। কেননা বর্তমানে স্থলভাগের ৫২ শতাংশ গ্যাস বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির কাছ থেকে কিনছে পেট্রোবাংলা। তাছাড়া আইনগতভাবে পিএসসি-২০০৮ সংশোধনেরও কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) কামরুজ্জামান কথা বলতে রাজি হননি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমদও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল সকালে বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে কনোকো। বিকালের দিকে ব্লক দুটি ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় তারা। জমা দেয়া প্রতিবেদনে মার্কিন কোম্পানিটি ১১ নম্বর ব্লকের একটি অংশে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানায়।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, দ্বিমাত্রিক জরিপে প্রাপ্ত ফল একটা ধারণা মাত্র। এতে গ্যাসপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক সময় কিছুই পাওয়া যায় না। তাই অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হলে কনোকো চলে যেতেই পারে। নতুন পিএসসিতে গ্যাসের দাম বাড়ায় কনোকো আসলে চুক্তি সংশোধনের দাবি তুলেছে। কিন্তু পিএসসি সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে অনেকদিন ধরেই গ্যাসের দাম বাড়াতে প্রস্তাব দিয়ে আসছে শীর্ষ গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানি শেভরন। দাম বাড়াতে হলে পিএসসি সংশোধন করতে হবে। কনোকোর প্রস্তাবে পিএসসি সংশোধন করা হলে শেভরনও একই দাবি তুলবে। এখন স্থলভাগে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির (আইওসি) কাছ থেকে আড়াই ডলারে কেনে পেট্রোবাংলা। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। পিএসসি সংশোধন হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জ্বালানি খাতের শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠান।

২০১১ সালের ১৬ জুন সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য কনোকোফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি সই করে পেট্রোবাংলা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে এ দুই ব্লকে সমুদ্রের গভীরতা এক-দেড় কিলোমিটার। এছাড়া পিএসসি-২০১২-এর আওতায় ডাকা দরপত্রেও অংশ নিয়েছে কনোকো। অগভীর সমুদ্রের সাত নম্বর ব্লকের জন্য নির্বাচিতও হয় যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানি। পরে কনোকো জানায়, তারা সাত নম্বর ব্লকের জন্য চুক্তি করতে আগ্রহী নয়। এছাড়া গভীর সমুদ্রের জন্য ডাকা অন্য একটি দরপত্রের মাধ্যমে আরেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি নরওয়ের স্ট্যাট অয়েলের সঙ্গে মিলিতভাবে ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকের জন্য দরপ্রস্তাব জমা দেয় কনোকো। তাদের প্রস্তাব বর্তমানে জ্বালানি বিভাগের বিবেচনায় রয়েছে।

পিএসসি অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের দুটি ব্লকের ৫ হাজার ১৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করার কথা কোম্পানিটির। গভীর সমুদ্রের জন্য নয় বছর মেয়াদি এ চুক্তিতে তিন ধাপে জরিপ ও খননকাজ চালানোর জন্য চুক্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানকাল পাঁচ বছর। প্রথম বর্ধিত অনুসন্ধানকাল ও দ্বিতীয় বর্ধিত অনুসন্ধানকাল দুই বছর করে, উন্নয়নকাল সর্বোচ্চ তিন বছর। প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে ভূতাত্ত্বিক জরিপ, ভূ-পদার্থিক জরিপ, অন্যান্য জরিপ (গ্র্যাভিটি, ম্যাগনেটিক, জিওকেমিক্যাল সার্ভে ইত্যাদি) এবং অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে কোম্পানিকে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশের ২৬টি গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক ও সম্ভাব্য মিলিয়ে উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ ২৭ দশমিক শূন্য ৪ টিসিএফ। এর মধ্যে গত মার্চ পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৩ টিসিএফ গ্যাস। বাকি মজুদের পরিমাণ ১৫ দশমিক ১১ টিসিএফ।