Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

1782464_871781742846790_968410669797747607_oবাংলাদেশ বিমানের গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান- সবকিছুই ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে বিমানবাহিনী জাদুঘর। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আইডিবি ভবনের বিপরীত পাশে এটি অবস্থিত। বিমানবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়া জাদুঘরটি নগরবাসীর বিনোদনের অন্যতম পর্যটনে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠে এই জাদুঘর। বিশেষ করে ছুটির দিনে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে উদ্বোধন করা হয় জাদুঘরটির। যা বিমানবাহিনীর সার্বিক তদারকিতে পরিচালিত হয়। জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য মাত্র ২০ টাকা। কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে প্রশাসনিক দফতর। সামনে এগুতেই হাতের বামে লোকেশন ম্যাপ। জেনে নিতে পারেন অবস্থান সম্পর্কে। সামনে যেতেই চোখে পড়বে বিভিন্ন পশু-পাখির প্রতিকৃতি। রয়েছে পানির ফোয়ারা। ফোয়ারা পেরোলেই দাঁড়িয়ে বিশাল আকৃতির এক বিমান এন-২৪ পরিবহন বিমান। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম যাত্রীবাহী বিমান।

chardike-ad

রাশিয়ায় তৈরি এই বিমান ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে বলাকা নামে সংযোজিত হয়। ৪৪ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার এই বিমান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন। আপনি চাইলে চড়ে দেখতে পারেন বিমানটিতে। মাত্র ৩০ টাকার একটি টিকিট সংগ্রহ করে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো বিমানটি। বিমানটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা রয়েছে। বলাকার দুপাশে রয়েছে দুটি র‌্যাডার। পি-৩৫-এম ও পিআরভি-১১ নামের র‌্যাডার দুটি ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হয়।

ঠিক পেছনের সারিতে দেখতে পাবেন এমআই-৮ নামের দুটি হেলিকপ্টার। রাশিয়ায় তৈরি হেলিকপ্টার দুটি ১৯৭২ সালে সংযোজিত হয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টার দুটিতে চড়তে পারেন মাত্র ৩০ টাকার টিকিট ক্রয় করে। পেছনেই রয়েছে গ্লাইডার বিমান।

এছাড়াও রয়েছে টি-৩৭, ফুগা সিএম-১৭০ ম্যাজিস্টার, পিটি-৬ ও এয়ার টুওরার ট্রেইনার নামের প্রশিক্ষণ বিমান। উত্তর দিকে রয়েছে আরও বেশকিছু বিমান। এই বিমানগুলো ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে আছে। এখানে চোখে পড়বে এয়ারটেক কানাডিয়ান ডিএইচই-৩/১০০০ অটার। এই বিমানটিকে বোমারু বিমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিমানটি দ্বারা ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আক্রমণ থেকে আক্রমণের মাধ্যমে ইস্টার্ণ তেল শোধনাগার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সফল অভিযান পরিচালিত হয়। আরও রয়েছে হান্টার বিমান জিন্যাট মিগ-২১ এফএল বিমান। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এই বিমানগুলো উপহার দেয়।

এছাড়াও রয়েছে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, এফটি-৫ প্রশিক্ষণ বিমান, এফ-৬ যুদ্ধবিমান, এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান, এ-৫, এ বিমান, এফটি-৭ বিমান। জাদুঘরের দক্ষিণে রয়েছে একটি ছোট শিশুপার্ক। যেখানে রয়েছে মজার কিছু রাইডস। চমৎকার পরিবেশে বসে ফাস্টফুডও খেতে পারেন পাশের ঝশুসবহঁ ক্যান্টিনে। ক্যান্টিনের পাশেই নির্মাণাধীন মসজিদ ও পাবলিক টয়লেটের কাজ প্রায় শেষ।

এছাড়াও দক্ষিণে আরও বেশকিছু নির্মাণ কাজ বাকি রয়ে গেছে। আপনার গাড়ি রাখার জন্য এখানে রয়েছে পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা। টুকিটাকি কেনাকাটা করে নিতে পারেন নিলাদ্রী শপ থেকে। বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে প্রসাধনী সামগ্রীসহ আরও অনেক কিছুই পাবেন এখানে।

বিমানবাহিনী জাদুঘর সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এবং সরকারি যে কোনো ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রোববার বন্ধ থাকে। জাদুঘরে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। কাটিয়ে আসতে পারেন কিছু সুন্দর মুহূর্ত। যেখানে আপনার ও সোনামণিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ।