এবার দেশেই পাট থেকে পলিথিনের বিকল্প পচনশীল পলিব্যাগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ খান পাটের তৈরি পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন। তার তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত পলিব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি।
বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত এ পলিব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে।
রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে শুক্রবার (১২ মে) সকাল ১০টার দিকে পলিব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট উদ্বোধন করবেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
বর্তমানে বিজেএমসির উদ্যোগে এই পচনশীল ব্যাগ তৈরির একটি সেমি অটোম্যাটিক পাইলট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে। তবে বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত এই পাট পলিব্যাগ তৈরিতে দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি। তাই এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে কিছু ছোটখাটো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশীয় প্রযুক্তিতে বড় মেশিন তৈরির জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। এতে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালন করা সম্ভব হলেই বাণিজ্যিকভাবে এই পলিব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক মোবারক আহমদ খান বলেন, ‘পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হয়। ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্যান্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এই ব্যাগ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ সেলুলোজ বিদ্যমান। তা ছাড়া এতে অন্য কোনো প্রকার অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার হয় না বিধায় এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আবিষ্কৃত এই ব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিথিনের প্রায় দেড়গুণ এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্য দ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী। তা ছাড়া দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় এই ব্যাগের দাম প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছিই থাকবে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশের দূষণের করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জলবদ্ধতা তৈরির একটি মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। সস্তা ও অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় নানা সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যবহৃত পলিথিন সুয়ারেজ পাইপ, ড্রেন, নদী, নালা ইত্যাদিতে পানি প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
মোবারক আহমদ খান আরও বলেন, ‘পাট থেকে আবিষ্কৃত পচনশীল পলিব্যাগ এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। তা ছাড়া এই ধরনের প্যাকেজিংয়ের বিদেশেও অত্যন্ত চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বিজেএমসিতে এই পচনশীল ব্যাগ তৈরির একটি সেমি-অটোম্যাটিক পাইলট প্ল্যান্ট বসানোর কাজ চলছে। পাইলট প্ল্যান্টটি সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হলে বাণিজ্যিকভাবে এই ব্যাগের উৎপাদন করার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে।’