Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমাদের দুই ছেলে আদিব মাহমুদ ও আরহাম মাহমুদ এক সাথে ‘কোরিয়ায়’ আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত ‘কিন্ডারগার্টেন’ নামক প্রাক-বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছে। কোরিয়ায় এক, দুই বছর হতে ছয় বছরের শিশুরা সাধারণত দিবা শিশু কেন্দ্রে যায়। কোরিয়ান ভাষায় যেটাকে বলে ‘অরিনিজিব’ (어리니집 )।

বন্ধুদের সাথে জন্মদিন পালন করছে আমার ছেলে আদিব

আমার সন্তানদের এই যাত্রা বছরে দুই, তিনটি পরীক্ষা দিয়ে ‘এ+’ পেয়ে পরবর্তী ক্লাসে উঠা বা শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার যাত্রা নয়। বিশেষত ছোট ছেলে আরহামের জন্য এ যাত্রা আচরণগত বিষয়গুলো শেখার জন্য। কিভাবে অভিবাদন জানাতে হয়,  অন্যের প্রশংসা করতে হয়, কিভাবে একতাবদ্ধ থাকতে হয়,  রাস্তাঘাটে চলতে হয়, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হয় এসব শেখানো হয় সেখানে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা ও জিনিসপত্রের যত্ন নেওয়া কিংবা নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস সেখানে প্র্যাকটিক্যালি শেখানো হয়।

chardike-ad
বছর শেষে সুন্দর গাউন পরিয়ে গ্রাজুয়েশন পার্টি দিয়ে শিশুদেরকে উৎসাহিত করা হয়

বাসা বা কমিউনিটির বাইরে এসব শেখা অনন্যসাধারণ এক ব্যাপার। বয়স ছয় হওয়া পর্যন্ত এখানে শিশুদের স্কুল ব্যাগে কোন বই থাকে না।  তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকে। যেমন দাঁত পরিষ্কারের ব্রাশ, খাবারের টিফিন, চামচ, পানি পানের গ্লাস,  টিস্যু,  বিশেষ নির্দেশনার কাগজ ইত্যাদি। সব শিশুরা আনন্দের সঙ্গে একসাথে খেলে, বেড়ে উঠে একই পরিবারের সদস্যের মতো ভালবাসার বন্ধনে। এ পর্যায়ে শিশুদেরকে কোন বাড়ির কাজ দেয়া হয় না, যা শেখার স্কুলেই শেখে।

গ্রাজুয়েশনের সার্টিফিকেট নিচ্ছে আদিব

শিক্ষকরা গায়ে হাত তুলেন না, শাসন করেন কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে। স্কুলের আচার পদ্ধতিতে শিশু বা তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, বর্ণ, ধর্ম বৈষম্যের সুযোগ এখানে হয় না। বিদ্যালয়ের প্রতিটি কার্যক্রম শিশুদের আনন্দ, চরিত্র গঠন, চিন্তা-চেতনার বিকাশ ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য করা হয়। একজন শিশুকে একজন নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সব প্রচেষ্ঠা চালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

শিশুদের সাথে অভিভাবকদের নিয়ে নানা আয়োজন করে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো

প্রবাসে এসে নিজের সন্তানের এভাবে শেখানোর বিষয়টা দেখে আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা চিন্তা করি। আমাদের শিশুদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই জরুরী। আমরা আশাবাদী বাংলাদেশেও একটি বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে।

লেখক- মোহাম্মদ আজম খান, সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি, বর্তমানে শিক্ষাছুটি নিয়ে কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত