Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ

akhiঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী মারজান আক্তার আঁখির সঙ্গে মেসেঞ্জারে যুক্ত হওয়ার জন্য ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একটি রিকোয়েস্ট পাঠায় সৌরভ। পাঁচ দিন পর রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন আঁখি। বাস্তব জীবনে অদেখা-অচেনা সেই সৌরভ ভার্চুয়াল পরিচয়ের সূত্র ধরেই আঁখিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। স্বাভাবিকভাবেই আঁখি তা নাকচ করে দিলে বন্ধু হিসেবে তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার অনুরোধ জানায় সৌরভ। সরল মনে সেই অনুরোধে রাজি হন আঁখি। সেই ভুলের খেসারত এখন গুনতে হচ্ছে ঢাবির ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এই ছাত্রীকে। প্রতারণার শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আঁখি। বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তার মধ্যবিত্ত পরিবারও।

আঁখি জানান, বন্ধু হিসেবে সৌরভের সঙ্গে মেসেঞ্জারে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তার। এরই এক পর্যায়ে সৌরভ জানায়, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। কাজ করে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের (এআইজি) বন্ড ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে। মেসেঞ্জারে কথোপকথনের সময় আঁখি সৌরভকে জানান, তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান। এজন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি। এ তথ্য জানার পর সৌরভ জানায়, সে আঁখির জন্য নিজের প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করতে পারে। সেই চাকরি পেলে আঁখি বছরে ৮৪ হাজার ডলার বেতনও পাবেন। লোভনীয় এই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখাতে গিয়ে সৌরভের প্রতারণার ফাঁদে পা দেন আঁখি।

chardike-ad

গত শনিবার প্রতারণার সেই বৃত্তান্ত সবিস্তারে তুলে ধরেন আঁখি। তিনি জানান, সৌরভ তাকে জানায় এআইজিতে কাজ পাওয়ার জন্য তাকে জব সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে। একই সঙ্গে আইটি ট্রেনিংয়ের সনদও লাগবে। দেড় লাখ টাকা দিলে ডা. জুয়েল নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে সৌরভ এসব সনদ জোগাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়। সেই অনুযায়ী একটি বিকাশ নম্বরে (০১৮২-৮২৩৯৭৫৯) প্রথমে ১০ হাজার টাকা পাঠান আঁখি। পরে গত বছরের ২৫ নভেম্বর এসএ পরিবহনের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা পাঠান তিনি। এ সময় অন্য একটি নম্বর (০১৬১৮-০৪৯৬২২) থেকে আঁখির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর আঁখিকে সুইজারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন থেকে আরেকটি সনদ জোগাড়ের কথা বলে সৌরভ। এজন্য আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয়। ২৭ নভেম্বর সবুজ নামে এক ব্যক্তি রাজধানীর ঝিগাতলায় এসে আঁখির কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে যায়। সবুজের সঙ্গে আঁখির যোগাযোগ হয় গুগল ডুও-র মাধ্যমে।

দেড় লাখ টাকা দেওয়ার পর সৌরভ জানায়, এআইজি কর্তৃপক্ষ আঁখির চাকরির আবেদন গ্রহণ করেছে। এখন ওই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপহার দিতে হবে। এজন্য এসএ পরিবহনের মাধ্যমে বেনাপোলে অবস্থানরত ভারতীয় এক বন্ধুর ঠিকানায় উপহার পাঠাতে বলে সৌরভ। ওই বন্ধু উপহার নিয়ে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে যাবে বলে আঁখিকে জানায় সৌরভ। তার কথামতো সাড়ে ১১ হাজার টাকায় তিনটি ঘড়ি কিনে এসএ পরিবহনের মাধ্যমে বেনাপোলের ঠিকানায় পাঠান আঁখি।

স্কাইপি, মেসেঞ্জার ও টেলিফোনে যোগাযোগ করে সৌরভ পরবর্তী সময়ে আঁখিকে জানায়, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করতে হবে। আঁখি একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট জোগাড় করে পাঠান। দ্রুত ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে সৌরভের কথামতো আরও ১৫ হাজার টাকা দেন আঁখি। সব মিলিয়ে তিনি মোট তিন লাখ টাকার উপরে খরচ করেন সৌরভের নির্দেশনায়।

গত ২৮ ডিসেম্বর সৌরভ জানান, আঁখির পাঠানো ব্যাংক স্টেটমেন্টে ভুল ধরা পড়েছে। এজন্য তার চাকরির আবেদন বাতিল হতে পারে। একই সঙ্গে আঁখির চাকরির প্রস্তাবক হিসেবে সৌরভ ৭০ হাজার ডলার ডিপিএস করেছে বলেও জানায়। চাকরির আবেদন বাতিল হওয়ায় ডিপিএসের ওই অর্থ জব্দ করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে সৌরভ। তেমন কিছু হলে আঁখিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলেও হুমকি দেয় সে। এ ঘটনার পর ৩০ ডিসেম্বর থেকে সৌরভের সঙ্গে আঁখির যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেদিন থেকে সৌরভের সব নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

ততক্ষণে আঁখি নিশ্চিত হয়, তার বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে সৌরভ গা-ঢাকা দিয়েছে। সে মূলত প্রতারক চক্রের সদস্য। এরপর ১ জানুয়ারি হাজারীবাগ থানায় এ ঘটনায় জিডি করেন আঁখি।

তিনি বলেন, তার বাবা খন্দকার মোমিনুল্লাহ ইরাকে একটি কোম্পানিতে ফোরম্যান হিসেবে কর্মরত। তার কষ্টের অর্থ খরচ করেই বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন আঁখি। এখন অর্থ ফেরত না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। নইলে ওই চক্রের মাধ্যমে আরও অনেকে প্রতারিত হতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আঁখি।

আঁখির করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার এসআই রাজিব হাসান বলেন, জড়িত কয়েকজনের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের ডিসি আলিমুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, আঁখির সঙ্গে যে প্রক্রিয়ায় প্রতারণা হয়েছে, তা সাইবার ক্রাইমের আওতায় পড়ে। এর সঙ্গে জড়িত প্রতারকরা অত্যন্ত ধূর্ত ও পেশাদার প্রকৃতির হয়ে থাকে। অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন এই কর্মকর্তা।

সৌজন্যে- সমকাল