Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

একজন মানবিক পুলিশ অফিসারের গল্প

shafiqueচাটমোহর থানার ফৈলজানা ইউনিয়নের খুব ছোট একটি গ্রাম কুঠিপাড়া। লোকসংখ্যা কম। কম আয়তনও। উচ্চ বিত্ত, মধ্যবিত্তের চেয়ে নিম্নবিত্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মানুষের গ্রাম কুঠিপাড়া। রবিউল ইসলাম তাদের একজন।

পিতা মৃত শাহজাহান আলী। পিতা খুব বেশি সম্পত্তি রেখে যেতে পারেননি। বসতবাড়ি আর অল্পকিছু আবাদি জমি। বাড়ির পাশদিয়ে বয়ে গেছে চিকনাই নদী। নদীর ওপারে আরেকটি গ্রাম, ইদিলপুর। বাবা বেঁচে থাকতে ইদিলপুর গ্রামে, অনেক কষ্টে ৫ হাজার টাকায় প্রায় পাঁচ বিঘা জমি কিনেছিলেন।

chardike-ad

বাবা মারা যাবার পর দীর্ঘদিন নিজেরা চাষবাস করেন। একসময় অভাবে পরে পুরো জমিটা বন্ধক রাখতে হয়। সমস্যা এটা না। সমস্যা হলো, মাত্র কদিন আগে কতিপয় দুষ্টলোকের দল অভিযোগ আনেন, জমির সঠিক কাগজপত্র নেই! ঘটনা এ পর্যন্ত থাকলেও সমস্যা ছিলো না।

অভিযোগকারী লোকগুলো ঘোষণা করেন, রবিউল ইসলামকে আর এই জমির আইলেও (সীমানায়) আসতে দেয়া হবে না! রবিউল ইসলামের কাগজপত্র যাচাই বাছাই না করেই, দুষ্টুলোকের দল জমি দখলে নেন।

ঘোষণা দেন জমিতে বলফিল্ড করা হবে। জমির চারপাশে লাল পতাকা পুঁতে দেয়া হয়! চোখের সামনে এতোকিছু ঘটতে দেখে প্রায় জ্ঞানশুণ্য হয়ে পড়েন রবিউল ইসলাম। বাবার পৈত্রিক সম্পদ অন্যরা দখল করে নিচ্ছে। জীবনে এমনটা কল্পনা না করলেও, বাস্তবে দেখতে হচ্ছে তাকে! তবে কী দেশে কোনো আইন নাই? বিচার নাই? শাসন নাই? এমন প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে।

কী করবেন কিছুই ভেবে পান না। এর ওর দারস্থ হয়েও লাভ হয় না! অবশেষে কেউ একজন পরামর্শ দেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে। দেড়ি না করে দৌঁড়ে যান শরৎগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে।

বাক্সপেটরা ঘাটাঘাটি করে, জমি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সাথে নিয়ে যান। তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর একেএম শফিকুল ইসলাম। হাসিমুখে আশ্বাস দেন। কাগজপত্র বৈধ আছে।

জমি অন্যেরা দখল করতে পারবে না। অথৈ সমুদ্রে ডুবতেবসা মানুষটি যেনো আশার আলো দেখতে পান। লিখিত অভিযোগ দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে একজন এএসআইকে পাঠান ঘঠনাস্থলে। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ফিরে আসেন।

এবার মানবিক পুলিশ অফিসারের মতো, জনগণের প্রকৃত বন্ধুর মতো কাজ শুরু করেন ইনচার্জ একেএম শফিকুল ইসলাম। অভিযুক্ত ৮ জনের তালিকা হাতে তুলে নেন। ফোন করেন। সরাসরি দেখা করতে বলেন অভিযুক্তদের।

কতিপয় দখলকারীরা দাবী করেন, জমি উনাদের। ইনচার্জ বলেন, কাগজপত্র দেখান, প্রমাণিত হলে আপনারা পাবেন। কিন্তু প্রমাণের আগে দখল করতে যাবেন কেনো? অবশেষে দুপক্ষকে ডাকেন শরৎগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। উভয়পক্ষের কাছে চাওয়া হয় জমির লিগ্যাল কাগজপত্র।

জমির প্রকৃতমালিক রবিউল ইসলাম প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দেখাতে পারলেও, কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি অপরপক্ষ। ইনচার্জ একেএম শফিকুল ইসলাম স্থানীয় সবার উপস্থিতিতে রবিউল ইসলাম জমির প্রকৃতমালিক হিসেবে পূর্বের ন্যায় চাষাবাদের অনুরোধ করেন।

সেইসাথে দখলকারীদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, পরবর্তীতে যেনো আর কোনো সমস্যা না হয়। যদি সমস্যা হয় তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসিমুখে ফিরে আসেন রবিউল ইসলাম। কাঠফাটা রোদে ছুটে যান বাবার রেখে যাওয়া জমির পাশে। আইলের এক কোনায় দাঁড়ান। মাথার উপর তপ্ত সূর্য। তীব্র গরম।

রবিউল ইসলাম জানেন না, তখন দিনের তাপমাত্রা ফোরটি প্লাস। তবে তিনি জানেন, দেশ থেকে আইন উঠে যায় নি৷ পুলিশদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও রবিউল ইসলামের মতো খেটে খাওয়া মানুষের কাছে, পুলিশ শব্দটা শ্রদ্ধার, সন্মানের। এবং সেটা শুধুমাত্র একজন ইনচার্জ, একজন মানবিক পুলিশ অফিসার একেএম শফিকুল ইসলামের কল্যাণে।

গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে দরদর করে গা ঘামে। কখন যেনো ছলছলে চোখ থেকে গড়গড় করে জল নেমে আসে। এ জল কৃতজ্ঞতার। হয়তো খুব সাধারণ ঘটনা এটা। কিন্তু রবিউল ইসলামদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে এই পাঁচ বিঘা জমির মূল্য অনেক বেশি। জীবনের চেয়েও বেশি মূল্যবান মনে করেন অনেকেই।

বিপদের দিনে তিনি কাউকে না পেলেও পুলিশকে পেয়েছেন। পেয়েছেন একজন মানবিক পুলিশ অফিসারের সহযোগিতা। এ সহযোগিতার কথা আজীবন মনে রাখবেন রবিউল ইসলাম, রবিউল ইসলামেরা।

ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশের মানবিক অফিসার, ইন্সপেক্টর একেএম শফিকুল ইসলাম। আপনি প্রমাণ করলেন পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ। এবং সত্যিকার অর্থে প্রমাণ করলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু।

লেখক- সুমন নূর