Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অর্থনৈতিক সংকটের মুখে উত্তর কোরিয়া

north-koreaউত্তরা কোরিয়ার বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কতটা মোকাবেলা করতে পারছেন? এ প্রশ্ন জাগার প্রধান কারণ উনের পিতা কিম জং-ইলের শাসনামলের পর দেশটির অর্থনীতি এত বাজে পরিস্থিতিতে পড়েনি। কিম জং-ইলকে নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে বন্যা, খরা ও দুর্ভিক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। এসব দুর্বিপাকে পড়ে দেশটির ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উত্তর কোরিয়া কতটা মোকাবেলা করতে পারছে, তার হিসাব এ মাসের শেষের দিকে প্রকাশিতব্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিবেদনে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্নতা, গোপনীয়তা ও দুর্ভিক্ষের যথার্থ পরিসংখ্যান সহজলভ্য না হওয়ায় দেশটি সম্পর্কে যেকোনো ধরনের বিশ্লেষণ জটিল বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গত বছর দেশটির অর্থনীতি ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক কিম বেয়ুং-ইয়েন।

chardike-ad

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হ্রাস পাওয়াটা দেশটিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ায় দেশটি ১৯৯৭ সালের পর সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৭ সালে দেশটির অর্থনীতি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংক অব কোরিয়া (বিওকে)। ফলে দেশটির অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতির সমান হয়ে পড়েছে। উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিওকের প্রতিবেদন এখনো প্রক্রিয়াধীন থাকায় এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্যাংটির এক কর্মকর্তা।

এদিকে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কিম জং-উন ৩০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছেন বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ১০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে একই সূত্র।

বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে চাপে রেখেই গত মাসে নিরস্ত্র অঞ্চলে (ডিমিলিটারাইজড জোন) যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরীয় দুই নেতা পুনরায় আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন।

নিজেরা আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চায় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরগান ওরটাগুস। সম্ভাব্য সব উপায়ে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় বলে জানিয়েছে একই সূত্র।

উত্তর কোরিয়া চীনের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। দেশটির ৯০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য হয়ে থাকে চীনের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও একমাত্র চীনের অকুণ্ঠ সহায়তার কারণে দেশটি সব অর্থনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি চীনে দেশটির রফতানি ক্রমেই কমেছে। বছরওয়ারি হিসাবে ২০১৮ সালে চীনে দেশটির রফতানি কমেছে ৯০ শতাংশ, তথা ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। একই সময়ে দেশটিতে চীনের খাদ্য ও জ্বালানি রফতানিও কমেছে বলে জানিয়েছে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন।

নিষেধাজ্ঞার আগে ২০১৫ সালে দেশটি ৩৯ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানি করেছে বলে জানিয়েছে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সি এজেন্সির দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক। নিষেধাজ্ঞার ফলে গত বছর দেশটি তেল আমদানি করেছে মাত্র পাঁচ লাখ ব্যারেল। এর অর্থ হলো, দেশটি তীব্র জ্বালানি তেল সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যান বলছে, উত্তর কোরিয়া অবৈধ পথে কমপক্ষে ২৬৩ ট্যাংকার পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি করেছে, যার পরিমাণ ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল জ্বালানির সমান।

জ্বালানি সংকট দেশটির কয়েক দশকের স্থবির অর্থনীতিকে আরো করুণ অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৯৯-২০১৭ সালের মধ্যে দেশটির জ্বালানি তেলের ব্যবহার ৮০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

জ্বালানি তেলের সংকট দেশটিতে স্বাভাবিকভাবেই ডিজেলস্বল্পতা সৃষ্টি করেছে। পর্যাপ্ত ডিজেল না থাকায় ট্রাক্টরের ব্যবহার ও সেচ কার্যক্রম কমেছে, ফলে গত গ্রীষ্মে দেশটিতে খরা দেখা দিয়েছে। গত বছর প্রতিদিন কৃষকরা ৯০ মিলিলিটারের চেয়ে কম জ্বালানি তেল পেয়েছেন, যা দিয়ে দুটি ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের বেশি চাষাবাদ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে একই সূত্র।

সূত্র: ব্লুমবার্গ