বাংলাদেশী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে) এর আয়োজনে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের দুইদিনব্যাপী ১৭তম মিলনমেলা। দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম পর্যটন অঞ্চল হিসেবে পরিচিত গজে দ্বীপের এই মিলনমেলায় অংশ নেয় প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। কোরিয়ার সবচেয়ে সুন্দর নীল সমুদ্র এবং পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত এক অপূর্ব সুন্দর দ্বীপে অসাধারণ দুইদিন কাটিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। মিলনমেলায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পোস্ট ডক্টরাল ফেলো এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ যোগ দেন। গত শনিবার এবং রবিবার গজে দ্বীপের হানা প্যানশনে দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে) এই আয়োজন করে।
মিলনমেলার প্রথমদিনে তানিয়া সুলতানা এবং মো: গোলাম রাব্বানীর উপস্থাপনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় ২ দিনব্যাপী আয়োজন এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসএকের ইটিআরটি সদস্য শরীফ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। এরপরই বিএসএকে সম্পর্কে পিপিটি প্রেজেন্টেশন দেন ইটি সদস্য রাফিউল হক রাহাত। নবীন এবং ডিগ্রীপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের হাতে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট তুলে দেন মিলনমেলার প্রধান অতিথি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান জনাব রুহুল আমিন এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। বিএসএকের মিলন মেলায় সর্বাধিক সংখ্যক অংশগ্রহণ কারীর পুরস্কার পান ড. হাসান তুরাবী।
নবীনদের পক্ষে জাইসান ইসলাম এবং ডিগ্রীপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ড. এমডি সালাউদ্দিন। বিদায়ী ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে স্মৃতিচারণ করেন মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশী গবেষকদের পক্ষ থেকে বিএসএকে নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. পিকে রয়। অনুষ্ঠানে বিএসএকে’র পক্ষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য পিএইচডি ডিগ্রিপপ্রাপ্ত ড. নূরুল হুদা ভূঁইয়া (কানন)।
মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিউলস্থ বাংলাদেশে দূতাবাসের প্রথম সচিব এবং দূতালয় প্রধান রুহুল আমিন বিএসএকে’র কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিএসএকের উপদেষ্টা এবং বিসিকেসহ কোরিয়ার বিভিন্ন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। হাসানুল হক বান্না এবং তাহমিনা তাসনিম নাহারের উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শুরু হয়।কোরিয়াতে পড়াশোনা করতে আসা ছাত্রছাত্রীরা গান, নাচ, কবিতা, যাদু, এবং মেয়েদের বালিশ খেলা নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সজানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেন উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা।
এবারের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো বিএসএকে ফুটবল নাইট। ১১টার দিকে খেলা আরম্ভ হয়ে চলে রাত ২ টা পর্যন্ত। যেখানে অংশ গ্রহন করে ১০টি বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক টিম। ফুটবল খেলা পরিচালনায় ছিলেন হাসানুল হক বান্না, মো: গোলাম রাব্বানী, ড. পিকে রয় এবং আল জাবের ফয়সাল। দর্শক এবং খেলোয়াড়দের আগ্রহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে খেলার সমাপ্তি হয়। এছাড়াও ফুটবল খেলার পাশাপাশি বরাবরের মত এবারেও ছিল বারবিকিউ এর আয়োজন।
মিলনমেলার দ্বিতীয় দিনে ৫টি বাসে করে প্রায় ২’শ শিক্ষার্থী গজে দ্বীপের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। বিকাল ৫টায় বিএসএকের গ্রীষ্মকালীন মিলন মেলার সমাপ্তির মধ্যে দিয়ে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরেছেন।
মিলনমেলায় অংশ নেওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মত। ব্যস্তময় প্রবাস জীবনে শত বাংলাদেশীকে একসাথে পাওয়া যেন সোনার হরিণ। যদি তাতে যোগ হয় একসাথে হাসি আড্ডা, গান, ভোজনবিলাস তাহলেতো কথাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, গবেষণার ব্যস্ততার মাঝে প্রতি সেমিস্টারে একবার দুই দিনের জন্য বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া (বিএসএকে)। নানা আয়োজনের পাশাপাশি কোরিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় হওয়ার অসাধারণ একটা সুযোগ এই মিলনমেলা।
অনেকে এই অনুষ্ঠানে এসে একসাথে এতো বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের পেয়ে, এক সাথে খেলা-ধুলা, বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক উপভোগ এবং এক সাথে দেশীয় খাবার উপভোগ করতে পেরে আয়োজকদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পারষ্পরিক সাহায্য সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন (বিএসএকে) গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফেসবুক এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছে সংগঠনটি। এছাড়া প্রতিবছর দুই সেমিস্টারে দুইবার মিলনমেলারও আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
আল জাবের ফয়সাল, নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন কোরিয়া। হানগুক ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন স্টাডিজ, দক্ষিণ কোরিয়া।