বসতভিটা ও কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মালয়েশিয়ায় বসবাসরত নরসিংদীর চার গ্রামের প্রবাসীরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীরা অভিযোগ করেন, প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবারের মানুষদের নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে এই প্রবাসে শান্তিতে থাকতে পারছি না। গ্রামবাসী বেশ কয়েকবার এ কাজে আপত্তি জানালেও চক্রটি বালু উত্তোলন বন্ধ করছে না। এমনকি বেশ কয়েকজনের নামে মামলাও করেছে এ চক্রটি।
নরসিংদীর মেঘনা নদী থেকে থেমে থেমে গত তিনবছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
সম্প্রতি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে অন্তত অর্ধ লাখ মানুষ ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার ভুক্তভোগী মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।
২৫ সেপ্টেম্বর কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় তারা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নরসিংদী সদর উপজেলার শ্রীনগর, জিতরামপুর, অনন্তরামপুর এবং নজরপুরের আবাদি জমি নদীগর্বে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আশপাশের বহু কৃষকের আবাদি জমি ভেঙে গেছে।
নরসিংদী সদর উপজেলার এই চার গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যতম পেশা কৃষি ও মাছ আহরণ। অবাদ বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি ও বায়ুদূষণ, প্রাকৃতিক ভূচিত্র নষ্ট হচ্ছে। এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপণ্ন হচ্ছে এবং মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
অথচ, ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। অতি দ্রুত এই বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে বাসিন্দাদের অস্তিত্ব সংকটও হতে পারে উল্লেখ করে প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের দাবি, এই চক্রের অন্যতম হোতা পৌর কমিশনার রিপন সরকার এবং নরসিংদী সদর উপজেলার ভূমি সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহ আলম মিয়া বালু উত্তোলন বন্ধ করার অনুরোধ করা হলে তাদের ছত্রছায়ায় থাকা চক্রের অন্যরা এলাবাসীকে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান নরসিংদীর মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি নরসিংদীর বাসিন্দা মনির বিন আমজাদ, আমাদুল্লাহ, এস এম সাইফুল, সৌকত আলী, আবুল হোসেন ও মো. ইকবাল সরকার বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে তাদের আবাদি জমি রক্ষা করতে হবে। নয়তোবা আবাসভূমি বিলীন হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওই চার গ্রামের বাসিন্দা মো. হাতেম আলী, মিলন মিয়া, নাদিম উদ্দিন, রফিকুল, আবুল হোসেন, রাকিব, উজ্জল, বাদশা দেওয়ান, রওসন আলী, রাসেল আহাম্মেদ ও মো. হাতেমসহ নরসিংদীর চার গ্রামের শতাধিক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।