Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বজনদের দেখতে পারবেন কারাবন্দিরা

prisonerদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ স্লোগান সামনে রেখে বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করা হবে। বন্দিরা ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বজনের দেখা ও কথা বলার সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, বন্দিদের সঙ্গে করা হবে মানবিক আচরণ।

কারাবন্দিদের জন্য থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। থাকবে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা। এজন্য তৈরি হচ্ছে যথাযোগ্য বাসস্থান। সুখাদ্য, চিকিৎসা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। কারাবন্দিদের সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মোটিভেশন এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অষ্টম বৈঠক কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

বৈঠকে এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, কারাগার হবে সংশোধনাগার। এ ভিশন সামনে রেখে কারা অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কারাগারে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান তিনটি, ২০০ শয্যা হাসপাতাল একটি বিদ্যমান। নারী কারাবন্দিদের জন্য ৪৫৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ডে কেয়ার সেন্টার আটটি, মাদকাসক্তদের জন্য আলাদা ৫৯টি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।

দেশে ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার ৬৬৪। বর্তমান বন্দির সংখ্যা ৮৯ হাজার ৩৯। তার মধ্যে বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ৭১ হাজার ৩৫৯।

কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানাতে গিয়ে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘প্রিজন লিংক প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দিরা স্বজনের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখা ও কথা বলার সুযোগ পাবেন। সকালে নাস্তা ও গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে দুদিন খিচুড়ি, একদিন হালুয়া, রুটি; চারদিন সবজি ও রুটি পাবেন। এ ছাড়া বিশেষ দিবসে উন্নত খাবার পরিবেশনে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।’

কয়েদি পরিচ্ছন্নকর্মীদের মাসিক মজুরি ২০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। কারাগারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির লাভের অংশ ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক হিসাবে প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইফতারির বরাদ্দ ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ২৮টি কারাগারে ৩৩ হাজার ৫৩১ জন বন্দিকে ৩৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান কারা মহাপরিদর্শক।

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬-১৮ অর্থবছরে ৯৭ হাজার ৯৪০ জন বন্দিকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়। ফলে ১১ হাজার ১৪০ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। কারাগারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিচ্ছন্নতার কারণে এবার ডেঙ্গু রোগ দেখা যায়নি। জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে দুই হাজার ২৫৩ জন কারারক্ষী এবং নারী কারারক্ষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।’

এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, দেশে কারাগারগুলোতে ১৪১ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত মাত্র ৯ জন চিকিৎসক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চিকিৎসক নিয়োগের জন্য পুল গঠনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে।

৫৪টি কারাগারে কোনো অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় অসুস্থ কয়েদিদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান কারা মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন, কারাবন্দিদের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মাদক মামলায় কারাবন্দির সংখ্যা ২৬ হাজার ৬৪৩। এর মধ্যে মাদকাসক্ত বন্দি তিন হাজার ৬৭৩। কক্সবাজারে উন্মুক্ত কারাগার স্থাপনের কাজ চলমান।

কারা মহাপরিদর্শক চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে কারা অধিদফতরের অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, কারা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক পদায়ন, দেশের সব কারাগারে প্রিজন লিংক স্থাপন, কারাগারে ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, কারাবন্দিদের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিতকল্পে যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহকরণ।

কারা অধিদফতরের মহাপরিচালক কমিটিতে আরও বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। এরপর কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শামসুল হক টুকু মহাপরিচালককে তথ্যবহুল উপস্থাপনার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।

এ সময় সাবেক পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ জানতে চান, কারাগারে এমন কোনো সফল ব্যবস্থা আছে কি না, যা দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হতে পারে। জবাবে মহাপরিচালক জঙ্গি এবং মাদকের বিষয়ে কারাগারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (কারা উইং) জানান, ইতোমধ্যে মন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যেমন- অনেক সময় একজন কয়েদির জামিন হলে জামিনের কাগজ পৌঁছালেও কয়েদি সঠিক সময়ে জানতে পারতেন না। এখন সব কারাগারের অভ্যন্তরে এবং বাইরে ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে একজন কয়েদি নিজেও যেমন সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পারেন, তেমনি তার নিকটাত্মীয়রা বাইরে থেকে ডিসপ্লেতে দেখতে পারেন জামিন হয়েছে কি না।

কারা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আপাতত কয়েকটি কারাগারে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও পর্যায়ক্রমে সকল কারাগারে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কারাগারে মাদকাসকক্ত এবং জঙ্গি কয়েদির বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। মোবাইল এবং মাদক প্রবেশ বন্ধ করার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, কারাগারে জঙ্গিদের আলাদাভাবে রাখা যায় কি না, তা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কারাগারের অবস্থা অনেক দেশ থেকেও ভালো অবস্থানে আছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে .০৫৬% মাত্র কয়েদি। অনেক উন্নত দেশেও তার হার অনেক বেশি। জঙ্গিদের আলাদা করার বিষয়ে সচিব (সুরক্ষা) দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এ কালচারটি বর্হিবিশ্ব দেখানো সঠিক হবে না। তাছাড়া কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। জঙ্গিদের নজরদারিতে রাখতে হবে, যাতে তারা অন্য কোথাও যোগাযোগ করতে না পারেন।

মহাপরিচালক বলেন, জঙ্গিদের আলাদা করার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়। বিভিন্ন রোগ, মাদকাসক্ত বা অন্যন্য পদ্ধতিতে তাদের আলাদা করা যায়। এখানে সেভাবে সম্ভব হয় না, কারণ তাদের হাজিরার জন্য মামলা সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাখতে হয়। মামলার দ্রুতবিচার নিশ্চিত করা গেলে এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে।

কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, কারা অধিদফতরের উপস্থাপনায় বোঝা যাচ্ছে, কারা ব্যবস্থাপনায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। তিনি মাদকাসক্ত এবং জঙ্গিদের ভিন্ন কৌশলে আলাদা রাখার প্রচেষ্টা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আইজিপি মহোদয় একজন ডায়নামিক কর্মকর্তা। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্বপালন, জনপ্রতিনিধিদের সেন্টিমেন্ট-এসব বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে আরও কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। কারাগারের বিপুলসংখ্যক জনবল শূন্য আছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে জনবল সংকট। এসব বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নিয়ে যোগাযোগ করে এর সুরাহা করার অনুরোধ করেন সভাপতি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জেলখানার সমস্যা দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, কাশিমপুর কারাগারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডাক্তার পদায়ন করা হলেও ডাক্তার জয়েন করেন না। এটি সারা দেশেরই সমস্যা। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার প্রেক্ষিতে পুলিশ, বিজিবি এবং কারাগারে ডাক্তার নিয়োগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাজের দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এতে জেলখানার কয়েদিরাও যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। জেলখানায় যে সকল কয়েদিদের উচ্চ নিরাপত্তা দেয়া দরকার, তাদের জন্য সেভাবেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email