Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

গাছের প্রিয় খাবার যখন ইদুঁর!!!

treeপৃথিবীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এই সকল গাছের মধ্যে কোনো গাছ ভেষজ ও উপকারী। আবার কোনো কোনো গাছ অপকারী ও ভয়ংকর প্রজাতির। তেমনই একটি গাছ হচ্ছে নেপেন্থেস অ্যাটেনবারোওঘি। এটি এর বৈজ্ঞানিক নাম।

দেখতে যত সুন্দর আর নিরীহই হোক না কেন, গাছটি আসলে একটি মাংসাশী গাছ। নানা কীটপতঙ্গ, পোকা-মাকড়, এমনকি বড় বড় ইঁদুর পর্যন্ত গিলে খায় এটি।

দেখতে অনেকটা কলসীর মতো স্থানীয়ভাবে এটি কলসী গাছ নামেও পরিচিত। এই কলসীর ভেতর লাল রঙের মধুর মতো এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে। আর মধুর মৌ মৌ গন্ধে ছুটে আসে পোকা-মাকড় । যখন কোনো পোকা-মাকড় মধু খেতে আসে তখন পা পিছলে এর ভিতরে পড়ে যায় , আর পোকা ভিতরে পড়া মাত্রই ঢাকনা বন্ধ হয়ে যায়। এর ভেতরে তরল পদার্থে বিশেষ এসিড ও অ্যানজাইম থাকায় কোন প্রাণী পড়া মাত্রই তা নিস্তেজ হয়ে যায়। ফলে ভেতরের এই প্রাণীটিকে সহজেই খাবারের উপযোগী করে তোলে ওই মাংসাশী গাছ।

chardike-ad

মূলত সকল কীটপতঙ্গই এই গাছের শিকার। তবে নানা প্রাণীর মধ্যে ইঁদুরই এই মাংসাশী গাছটির কবলে বেশি পড়ে। আর বিজ্ঞানীদের গভীর পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ইঁদুরই হচ্ছে এই গাছের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। গাছটি বিজ্ঞানীসহ সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।

২০০০ সালের দিকে এই গাছটির প্রথম সন্ধান মিললেও সম্প্রতি গাছটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। ফিলিপাইনের পালাওয়াযানের নির্জন পাহাড়ী এলাকায় এই গাছ দেখা যায়।tree1

ইংরেজি মুভিতে আমরা দেখেছি কিভাবে একটি গাছ মানুষকে খেয়ে ফেলছে। প্রথমে গাছটি তার শিকারকে বট গাছের ন্যায় শুর দিয়ে জাপটে ধরে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তার শিকারকে গ্রাস করে নেয়। ছোট বেলায় এই ছবিগুলো দেখলে ভয় পেতো অনেকে।

তবে একথা সত্যি মানুষ খেকো গাছ না থাকলেও মাংস খেকো গাছ পৃথিবীতে আছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাংস খেকো গাছ পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে প্রজাতির গুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে কলস, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, বøাডার ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ ইত্যাদি।

সাধারণত এসব গাছ মাটিতে তার জন্য পর্যাপ্ত খাবার পায়না, ফলে তার ক্ষুধা মেটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রাণী খেয়ে থাকে।

এদের মধ্যে পৃথিবীতে সেরা মাংস খেকো গাছ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ। আমেরিকার সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনায় এই উদ্ভিদগুলো ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। গাছগুলো প্রায় এক ফিটের মতো লম্বা হয়, আর এর পাতাগুলো দেখতে অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো হয়। গাছের প্রতিটি পাতা তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে অনেকগুলো ছোট ছোট লোম থাকে। যখনি ভুলে কোন পোকামাকড় এই পাতার উপর বসে পড়ে মুহুর্তের মধ্যে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ভেনাস ট্র্যাপের পাতাগুলো খুবই সংবেদনশীল। এই গাছের ক্ষমতা এতো বেশী যে এটি আধ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে তার পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে।

ঠিক এই সময় আবার পাতার লোমগুলোও পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয় ফলে পোকাটি আর সেখান থেকে বের হতে পারে না। পরবর্তীতে পাতা থেকে একধরণের বিশেষ রস বের করে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে ভেনাস ট্র্যাপের সময় লাগে ১০ দিনের মতো।

tree3ভেনাস ট্র্যাপের পাতা একসাথে ৩ থেকে ৪টি পোকা ধরতে পারে এবং পরবর্তীতে যখন এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তখন আবার নতুন করে পাতা গজায় এবং পুনরায় সে নতুন পাতাগুলো পোকামাকড় ধরতে থাকে।

উদ্ভিদগুলোর আচরণ ঠিক এমন হওয়ার কারন কি? বিজ্ঞান বলে এই গাছগুলোর বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর পরিমানে নাইট্রোজেন প্রয়োজন হয় এবং মাটি থেকে সে যথেষ্ট পরিমানে নাইট্রোজেন না পাবার দরুন, এমন মাংসাশী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।

আবার কিছু কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার প্রয়োজনে বিবর্তনের মাধ্যমে এই সব উদ্ভিদ মাংসাশী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।

আর অবাক করা বিষয় হলো এই উদ্ভিদ প্রায় সকল কীটপতঙ্গই খেয়ে থাকে। তবে অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে কলস গাছের মতো ইঁদুরই এই মাংসাশী গাছটির কবলে বেশি পড়ে।

এই গাছের কথা শুনে আমরা হয়তো ভয় পাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই গাছ তেমন কোন ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে আজও প্রমাণিত হয়নি এবং বর্তমানে অনেকেই তাদের বাড়িতে টবের ভেতরে এর চাষ করছে।

কি ভাবছেন গাছের টবে পানি দেবার সময় আপনাকে কামড় দেবে নাতো? না দেবে না, কারণ এটা শুধু পোকামাকড়ই খায়।

সূত্রঃ প্রতিক্ষণ