Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উন্মুক্ত হচ্ছে বিদেশে বিনিয়োগ

malaysiaদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। চলতি বছরের ১৪ মে সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এখন অপেক্ষা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিদেশে বিনিয়োগের প্রথম সুযোগ পাচ্ছে দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপ। বেশকিছু শর্ত পূরণসাপেক্ষে তারা ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করবে।

chardike-ad

এর আগে গত ১৪ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, দেশি কোম্পানি বিদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোম্পানিগুলোর কাছে আবারও বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করবে। এরপর কেস টু কেস ভিত্তিতে সরকার তা দেখবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ ও বাংলাদেশি উদ্যোক্তা কর্তৃক বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. আলী আকবর ফরাজী অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের কাছে এ মতামত পাঠান।

এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলস লিমিটেড, হা-মীম ও নিটল-নিলয় গ্রুপকে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত আবেদন করতে বলা হয়।

এছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশি উদ্যোক্তা কর্তৃক বিদেশে ‘বিনিয়োগ নীতিমালা’ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রস্তুতপূর্বক অত্র কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের মতামত প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। মতামতপ্রাপ্তির পর যথাসম্ভব দ্রুত সমন্বিত করে খসড়া নীতিমালা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

তবে স্থানীয় তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধুমাত্র আকিজ জুট মিলস লিমিডেট ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তসহ প্রকল্প দাখিল করেছে। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের (হা-মীম ও নিটল-নিলয় গ্রুপ) প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।

আবেদনপ্রাপ্তির পর বাংলাদেশ ব্যাংক কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) কর্তৃক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর আকিজ জুট মিলস লিমিডেটকে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মালয়েশিয়াতে বিনিয়োগের জন্য অনুমতি দেয়ার সুপারিশ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বিবেচনাযোগ্য মনে করলে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের জন্য তা উপস্থাপন করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামতে বলা হয়, বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি গত ২২ আগস্টের প্রথম সভায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলস লিমিডেটকে মালয়েশিয়ার ‘আকিজ রিসোর্স এসডিএন বিএইচডি’ নামক কোম্পানি (যার শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি রবিন ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডিসহ) অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। এর অনুকূলে আকিজ জুট মিলস পরিচালিত এক্সপোর্টার্স রিটেনশন কোটা হিসাবে স্থিতি থাকা সাপেক্ষে তা থেকে প্রস্তাবিত অনাবাসী সাবসিডিয়ারি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি-এর অনুকূলে মালয়েশিয়ায় ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট বাবদ ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানোর আবেদনপত্র পিইসি’র বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। কমিটি এ ব্যাপারে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ ও মতামত গ্রহণ করে।

সূত্র জানায়, আকিজ জুট মিলস লিমিটেড নিজের শতভাগ মালিকানায় মালয়েশিয়ায় ২০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পরিশোধিত মূলধনে আকিজ রিসোর্স এসডিএন বিএইচডি নামের একটি কোম্পানি গঠন করবে। এ কোম্পানি তার পরিশোধিত মূলধনের ২০ মিলিয়ন ডলার এবং বিদেশ থেকে ৬০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে মোট ৮০ মিলিয়ন ডলারে রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি নামের কোম্পানি ক্রয় করবে। এটি ক্রয় করা হবে সিঙ্গাপুরের হোল্ডিং কোম্পানি রবিনা রিসোর্স পিটিই লিমিটেডের কাছ থেকে।

কমিটি এখানে দেখতে পায় যে, মালয়েশিয়ায় প্রস্তাবিত সাবসিডিয়ারি আকিজ রিসোর্সেস এসডিএন বিএইচডি এবং এ সাবসিডিয়ারি কর্তৃক অধিগ্রহণতব্য রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি এর ওপর স্থানীয় আকিজ জুট মিলস লিমিটেডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

প্রস্তাবিত বিনিয়োগের মাধ্যমে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড মালয়েশিয়ার রবিন রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি অধিগ্রহণ করে মালয়েশিয়ায় ফাইবার বোর্ড এবং কাঠ ভিত্তিক পণ্য উৎপাদন এবং সেখান থেকে উৎপাদিত পণ্য দেশে রফতানি করবে। যেহেতু এ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় না সেহেতু ওই কোম্পানি মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করলে দেশের রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে না।

প্রস্তাবিত বিনিয়োগ থেকে আগামী ১০ বছরে ৮৩ দশমিক শূন্য ৬ মিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন সক্ষম হবে এবং এ মুনাফা থেকে লভ্যাংশ বাবদ আগামী ১০ বছরে ২৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলার দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী কর্তৃক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারী আগামী বছরগুলোতে যে পরিমাণ করোত্তর মুনাফা অর্জনের প্রাক্কলন করা হয়েছে তার সম্পূর্ণ অংশ লভ্যাংশ আকারে দেশে প্রত্যাবাসন করা হলে আবেদনকৃত ২০ মিলিয়ন ডলার আগামী তিন বছরে দেশে ফেরত আসবে। বিনিয়োগের গন্তব্যস্থল মালয়েশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রানীতির বিধান অনুসারে ওই দেশ থেকে বিনিয়োগের অর্থ ও মুনাফা অবাধে প্রত্যাবাসন যোগ্য।

কমিটি মনে করে, আকিজ জুট মিলস তার হিসাব থেকে বিনিয়োগের অর্থ প্রেরণ করবে বিধায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর প্রভাব পড়বে না।

তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগ করতে দেয়া নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত এত বেশি হয়নি যে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। আর দেশ যখন বিনিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন বিদেশে কেন? এটি কে তদারক করবে? তাই বিষয়গুলো অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অনুমতি না দেয়া হলে টাকা এমনিতেই চলে যাবে। এর চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়াই ভালো।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কেনিয়া, কম্বোডিয়া, জর্ডানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের বেশকিছু কারখানা হয়েছে। কাজেই এগুলো ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে পারলে খারাপ হবে না।

প্রসঙ্গত, বর্তমান আইন অনুযায়ী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একজন রফতানিকারক ব্যবসা বাড়াতে অন্য দেশে লিয়াজোঁ বা সহযোগী অফিস খোলা ও ব্যয় নির্বাহে বছরে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন। জাগো নিউজ