শনিবার । ডিসেম্বর ২০, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ১০ অগাস্ট ২০২৫, ১১:০০ অপরাহ্ন
শেয়ার

ড. ইউনূসের সঙ্গে খালার দ্বন্দ্বের জেরে আমি ক্ষতির শিকার: টিউলিপ


টিউলিপ সিদ্দিক
যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “মূলত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও আমার খালা শেখ হাসিনার মধ্যে বিরোধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমি ক্ষতির মুখে পড়েছি। বাংলাদেশে যারা অন্যায় করেছেন তাদের বিচার হওয়া উচিত কিন্তু আমি তাদের মধ্যে একজন নই।”

রবিবার গার্ডিয়ানে টিউলিপের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন গার্ডিয়ানের প্রধান প্রতিবেদক ড্যানিয়েল বফি। সাক্ষাৎকারের শেষাংশে টিউলিপ দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত ওই মন্তব্য করেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ৪২ বছর বয়সী টিউলিপের দাবি সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারেন, তাকে বাংলাদেশের একটি দুর্নীতির মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজি হওয়ার সুবাদে তিনি ঢাকার পূর্বাচলে তার মা, ভাই ও বোনের জন্য প্লট আদায় করেছিলেন। টিউলিপ এই অভিযোগকে “সম্পূর্ণ হাস্যকর” বলে মন্তব্য করেছেন।

১১ আগস্ট তার ও আরও ২০ জনের বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। তবে তিনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি। তার ভাষায়, “আমি যেন এক ধরনের দুঃস্বপ্নে আটকে গেছি, যেখানে আমাকে বিদেশে বিচার করা হচ্ছে অথচ আমি জানিই না অভিযোগটা আসলে কী।”

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রয়োজনে অনুপস্থিতিতেই টিউলিপের বিচার চলবে। দোষী সাব্যস্ত হলে প্রত্যর্পণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হতে পারে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিটি মন্ত্রী ছিলেন টিউলিপ। তিনি দাবি করেছেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই, আমি নিজেই খোঁজ নিয়ে জেনেছি।”

গত বছর যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির জয়ে টিউলিপ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলনে ভেঙে পড়লে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সহিংসতায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়, এবং শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারত পালিয়ে যান।

২০২৫ সালের শেষ দিকে, মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই টিউলিপকে নিয়ে নানা অভিযোগ ছড়াতে থাকে। একটি ওয়েবসাইট দাবি করা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রুশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি থেকে তিনি ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি ২০১৩ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার একটি ছবি নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়।

আরেকটি অভিযোগে বলা হয়, ২০০৪ সালে কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট তিনি উপহার পান, যা নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির সহযোগী দিয়েছেন। টিউলিপ জানান, ফ্ল্যাটটি তিনি এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন, যার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এছাড়া তিনি কেন নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অন্যের বাড়িতে থাকছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। টিউলিপের ব্যাখ্যা, নিরাপত্তা হুমকির কারণে তিনি সেখানে থাকতেন এবং বাজারমূল্যের ভাড়া দিতেন।

নিজের সাফাই দিতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ নীতিমালা পরামর্শদাতা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে যান, যিনি দুই সপ্তাহের তদন্ত শেষে জানান, টিউলিপ নীতিমালা ভঙ্গ করেননি, তবে পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট ভাবমূর্তি ঝুঁকি সম্পর্কে তার আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।

সাক্ষাৎকারের বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছর অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় তার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন টিউলিপ। তবে অধ্যাপক ইউনূস তা প্রত্যাখ্যান করেন।

যুক্তরাজ্যে টিউলিপ এখন তার স্বামী ক্রিস পার্সি ও দুই সন্তান নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রসঙ্গ তোলা হলে টিউলিপ বলেন, ‘আমি এখানে আমার খালাকে রক্ষা করতে আসিনি। তার বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমি প্রত্যাশা রাখি, বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত সমাধান পাবে।’ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে টিউলিপ অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি তার জীবন বদলে দিয়েছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান