Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশের কৃষিবিজ্ঞানীর আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ

mirza-tofazzolকৃষিতে পরমাণু শক্তি শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আইএইএ-এফএও-এর বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন বিনার কৃষি বিজ্ঞানী ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম।

আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এক অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

chardike-ad

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি আইএইএর মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানোর হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।

পরমাণু শক্তির ব্যবহার শুধু ধ্বংসাত্মক নয়। শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে মানব কল্যাণে রাখতে পারে অবিস্মরনীয় অবদান। কৃষিতে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা। তারই স্বীকৃতি এই পুরস্কার। মোফাজ্জল ইসলাম বিনার উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান।

সারা বিশ্ব যখন পরমাণু শক্তির অপব্যবহারে মত্ত। তখন কৃষিতে ওই শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম অধিক উৎপাদনশীল ও জলবায়ুর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সহিষ্ণু মোট ১৬টি ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে পাট, সব্জি পাট, মুগ ডাল, মটরের ৯ টি মিউট্রিয়েন্ট জাত এবং ধানের ৭টি জাত।

ড. মির্জা উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলোর মধ্যে লবণ সহিষ্ণু ২টি জাত বিনাধান-৮ ও বিনাধান-১০ এবং বন্যা সহিষ্ণু ২টি জাত বিনাধান-১১ ও বিনাধান-১২ যা উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা ও বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে।

পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে ড. মির্জা বলেন, আমি আমার এ পুরস্কার দেশের গরিব কৃষকদের জন্য উৎসর্গ করলাম। আমার এ প্রাপ্তি তখনই সফল হবে যখন আমি দেখব, দেশের কোন কৃষকই আর গরিব নেই। দেশে খাবারের কোন অভাব নেই। জলবায়ু প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষক ধান চাষ করতে পারছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ড. মির্জা বলেন, আমরা এমন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করতে কাজ করছি, যে ধান হবে লবণ ও বন্যা সহিষ্ণু, সেই সাথে ধানের মধ্যে থাকবে সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনসিস্টিউট এর অর্থায়নে ওই জাত উদ্ভাবনের কাজ ইতো মধ্যে আমরা শুরু করেছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে কৃষকদের মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে পারব।

ড. মির্জা বলেন, লবণ সহিষ্ণু ২টি জাত ও আকস্মিক বন্যা সহিষ্ণু ধানের ২টি জাত চাষ করা হলে লবণ ও বন্যা কবলিত জমির শতকরা প্রায় ৪০-৫০ ভাগ চাষের আওতায় আসবে এবং এতে প্রতি বছর প্রায় অতিরিক্ত ৭০-৮০ লক্ষ টন ধান উৎপাদিত হবে যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নবদিগন্তের সূচনা হবে।

কৃষি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ গত বছর ড. মির্জার গবেষণা দল ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকে। এছাড়াও কৃষিতে পরমাণুর ব্যবহার বিষয়ক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপনে ওই বছরই তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনসিস্টিউটের বেস্ট পোস্টার অ্যাওয়ার্ড।

সফল বিজ্ঞানী, গবেষক কৃষিবিদ ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম (অপু) ১৯৬৫ সালের ২০ মে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার আগচারান গ্রামে এক সম্ভ্রন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৮০ সালে বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নটরডেম কলেজ হতে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৭ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি বিএসসি এজি (অনার্স) ও ১৯৮৮ সালে জেনেটিকস ও প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগ হতে এমএসসি (এজি) ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তার স্ত্রী ড. শামছুন্নাহার বেগম (লুনা) একই প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

সুত্রঃ রাইজিংবিডি